কনস্ট্রাকশন ট্রায়াল পাইল বসানো শুরু হচ্ছে আজ: পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাকশন ট্রায়াল পাইল স্থাপন হচ্ছে শুক্রবার শুক্রবার। সকাল ১০টায় ৩ হাজার টন ওজন ক্ষমতার জার্মানীর হ্যামার ড্রাইভ করে এটি স্থাপন শুরু হবে। মাওয়া সাইডের নদীর ৭ নম্বর পিলারে বসছে এটি।

এর আগে টেস্ট পাইল স্থাপন কাজ শুরু হলেও কনস্ট্রাকশন ট্রায়াল পাইল স্থাপন এই প্রথম।

পদ্মা সেতুতে মোট দু’টি কনস্ট্রাকশন ট্রায়াল পাইল স্থাপন হবে।

আর টেস্ট পাইল স্থাপন হবে মোট ১০টি। এরইমধ্যে ৩টি টেস্ট পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। ১২০ মিটার দীর্ঘ কনস্ট্রাকশন পাইলটি মূল পাইলের মতই তিন মিটার ব্যাস রয়েছে। জার্মানী থেকে আসা বিশাল হ্যামারও এই প্রথম ব্যবহার করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে ২১ আগস্ট পদ্মা সেতুর জন্য স্মরণীয় একটি দিন।

দেশী বিদেশী প্রকৌশলী এবং বিশেষঞ্জ প্যানেল এটি স্থাপনের প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশের পরই এটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মূলসেতুর ঠিকাবার চায়না মেজর ব্রীজ কোম্পানি।

এটি বসানোর এবং কাজের গুণগত মানও পর্যবেক্ষণ চলবে নিখুঁতভাবে। সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূলসেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেছেন, পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এই কনস্ট্রাকশন ট্রায়াল পাইল স্থানের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে। এরই মধ্য দিয়ে মূল পাইল স্থাপনের কাজ শুরু প্রক্রিয়াও এগিয়ে গেল।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী অক্টোবরেই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মূল পাইল স্থাপনের কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যেই মূলসেতুর ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সবমিলিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।

নদী শাসন, দুপারের এ্যাপ্রোচ সবই চলছে এখন পুরোদমে। তবে নদী শাসনের ড্রেজিং করা বিপুল পরিমাণ বালু ফেলার স্থান নির্ধারণ নিয়ে রয়েছে কিছুটা সমস্যা।
এই সূত্রটি জানায়, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে হংকং ও সিঙ্গাপুরের ন্যায় শহর গড়ে তোলা বা পদ্মার চরে অলিম্পিক ভিলেজসহ নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেখানে এই বালু ব্যবহার করলে বিপুল অর্থের সাশ্রয় ছাড়াও ড্রেজিংয়ের এই বালু রাখার সঙ্কটের সমাধান হতে পারে।

এ ব্যাপারে শীর্ষ পর্যায়ের ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৃষ্টি-বর্ষার মধ্যেও উত্তাল পদ্মায় সেতুর কাজ চলছে পুরোদমে। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে নদী ভাঙ্গন দেখা দিলেও তা প্রতিরোধ করা হয়েছে। এখন সব কিছুই পদ্মা সেতুর অনুকূলে।

৪২টি পিলারের ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের সর্ববৃহৎ এই সেতুটি নির্মিত হবে। ১৫০ মিটার পর পর থাকছে পিলার। এছাড়া দেড় কিলোমিটার করে উভয়পারে তিন কিলোমিটার সংযোগ সেতুর জন্য আরও ২৪টি পিলার করা হবে। মূলসেতুর ৪০টি পিলারে ৬টি করে ২৪০ এবং দু’পারের ১২টিতে দু’টি করে ২৪টি অর্থ্যাৎ সর্বমোট ২৬৪টি পাইল করতে হবে।

পদ্মা বহুমুখী এই সেতু হবে দ্বিতল। সেতরু উপরের তলায় থাকবে চার লেনের মহাসড়ক। নিচে রেললাইন। ট্রেনের গতিসীমা হবে ১৬০ কিলোমিটার। থাকবে গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগ। দেশের দক্ষিণ পশ্চিম গ্যাস সরবরাহের জন্য থাকবে হাইপ্রেসার গ্যাস পাইপলাইন। পদ্মা সেতু নির্মাণের পর মঙ্গলা সমুদ্রবন্দরের ব্যবহার বাড়বে। পিছিয়ে পড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিল্পায়ন ও বিনিযোগ বাড়বে। বাড়বে জীবনযাত্রার মান ও মাথাপিছু আয়। নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতুর দ্রুত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দেখে তাই আনন্দে উদ্বেল এই অঞ্চলের মানুষ।

বাসস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.