দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই: আধারা

সাদনান সিয়াম: আধারা ইউনিয়নকে একটি ছোট নদী ভাগ করে রেখেছে। আর এই নদীর এপার ওপারকে কেন্দ্র করে এখানে রাজনীতি ঘুরপাক খায়। এপারকে মুলত পশ্চিমপারকে বুঝানো হয়। এই পশ্চিমপারে প্রায় ১৫ হাজার ভোটার রয়েছে। পূর্বপারে সাড়ে ৭হাজার ভোটার রয়েছে।

কিন্তু পশ্চিমপারে বেশি ভোটার থাকলেও নির্বাচনী খেলায় চেয়ারম্যানশীপ চলে যায় পূর্বপাড়ে। নির্বাচনী ঝড়ো হাওয়ায় বছরের পর বছর পূর্ব পশ্চিমপাড়ের ঠান্ডা লড়াই চলছে ভোটারদের মধ্যে।

পশ্চিমপাড়ে বেশি ভোট থাকলেও ভাসমান ভোট বেচা কিনা হয় বলে এখানকার ভোটাররা অভিযোগ করেছেন। বেচা কিনা ভোটের রাজনীতিতে এখানকার ভোটররা বর্তমানে অতিষ্ঠ।

এবারের নির্বাচনে পূর্বপাড়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন আধারা ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আনারস প্রতীকের সোহরাব হোসেন। বর্তমানে সোহরাব হোসেন এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।

আর এখানে পশ্চিমপাড় থেকে মুন্সীগঞ্জ সদর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস প্রতীকের সামসুল কবির মাস্টার নির্বাচনী লড়াইয়ে ময়দানে নেমেছেন।

গত নির্বাচনে সামসুল কবির মাস্টার মাত্র ৫০ ভোটের জন্য সোহরাব হোসেনের কাছে হেরে যান। গতবার পশ্চিমপারে অন্য এক প্রার্থী ২৬শ’ ভোট নিজের পক্ষে টেনে নেয়ায় সামসুল কবির মাস্টার সেই নির্বাচনে বিজয়ের আলোর মুখ দেখেনি বলে ভোটাররা মনে করছেন।

এ কারণে সামসুল কবির মাস্টার সেই নির্বাচনে মাইনাস পয়েন্টে চলে যান। এবারের নির্বাচনে এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। পশ্চিমপারে এবার সামসুল কবির মাস্টার একাই প্রার্থী। তাই গতবারের পরিবেশ এবারের নির্বাচনে নেই। এবারের নির্বাচন পশ্চিমপারের নির্বাচনী হাওয়া সামসুল কবির মাস্টারের অনুকুলে রয়েছে বলে এখানকার ভোটাররা মনে করছেন।

পশ্চিমপারের বিপুল পরিমান ভোট নিয়ে একক প্রার্থী হিসেবে সামসুল কবির মাস্টার নির্বাচনী জোয়ারে ভাসছেন। এবার পশ্চিমপারের ভোট বেচা কিনার রাজনীতি না হলে শতভাগ বিজয়ের সম্ভাবনা সামসুল কবির মাস্টারের।

পশ্চিমপারে ইউনিয়ন ভবন। এবারের নির্বাচনে সোহরাব বিজয়ী হলে পশ্চিমপারের ইউনিয়ন ভবনটি সরিয়ে পূর্বপারের মিনা বাজারে নিয়ে যাওয়া হবে বলে ভোটের বাজারে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। অনেক ভোটারের অভিযোগ হচ্ছে নির্বাচনী বিজয়ের লক্ষ্যে এ বিষয়ে ধুয়াশা তোলা হচ্ছে।

এখানকার ভোটারদের অভিযোগ সোহরাবের সময় পশ্চিমপারে কোন উন্নয়ন হয়নি। এ কারণে এবারের নির্বাচনে সোহরাবকে পশ্চিমপারের ভোটাররা প্রত্যাখান করবে। এবার আধারা ইউনিয়নের জন্য ৮টি সোলার লাইট বরাদ্দ হয়। কিন্তু সোহরাব পূর্বপারে ৭টি সোলার লাইট লাগায়। আর পশ্চিমপারে মাত্র ১টি সোলার লাইট লাগায়। এই নিয়ে এখানে ভোটারের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

সোহরাবের পূর্বপাড়ের ভোটাররা ঐক্যবদ্ধ। এখানকার ভোটাররা একচাটিয়া সোহরাবকে ভোট দিবে বলে অনেকেই মনে করেন। আর এই ভোটের ওপর নির্ভর করে এখানে সব সময় একজন করে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়। তবে বিজয়ের জন্য পশ্চিমপারের ভাসমান ভোট খুবই জরুরী। সেই ভোটের ওপর নির্ভর করবে সোহরাবের জয়পরাজয়।

সামসুল কবির মাস্টারের সমর্থকদের দাবি এবারের নির্বাচনে পূর্বপাড় থেকে তারাও ভোট পাবে। ঐপারে ঐক্যবদ্ধ ভোট এবার থাকবে না। কারণ হচ্ছে বিগত দিনে মেঘনা নদীতে বালু কাটা নিয়ে ওখানে ভোটারদের মধ্যে নানা রকমের কথা চালাচালি হচ্ছে।

অনেকের অভিযোগ সেই সময় মাটি কাটার ভাগ সোহরাব ১০ হাজার টাকা করে প্রতিদিন হাতিয়ে নিয়েছে। এই বিষয়টি সোহরাবকে মাইনাস পয়েন্টে রাখবে বলে অনেকেই মনে করছেন। তাই এবারের নির্বাচনে পূর্বপাড়ের ভোটের রাজনীতিতে ফাটল দেখা দিবে।

তবে পূর্বপারের অনেক নেতাকে সামসুল কবির মাস্টারের সাথে দেখা যাচ্ছে। তাই এই বিষয়টি সামসুল কবির মাস্টারের অনুকুলে ভোটের হাওয়া বইছে।

এদিকে চিতলিয়া বাজারে নৌকার কোন পোস্টার দেখা যায়নি। অনেকের অভিযোগ লাখ লাখ টাকা খরচ করে নৌকার প্রার্থীর পোস্টার আধারা গ্রামে লাগানো হয়েছে বুধবার রাতে অর্থ্যাৎ ১৮ মে। আধারা গ্রামে বিএনপি নেতাদের মোটা অংকের অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করে এই পোস্টার লাগানো হয়। আর এই বিষয়টি সঠিকভাবে হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য সোহরাব নিজে বৃহস্পতিবার বিকেলে আধারা গ্রামে যান। এরপর এখানে সোহরাব উঠোন বৈঠক করেন। সোহরাবের নির্বাচনী প্রচারনায় স্থানীয় ভোটারদের বেশি দেখা যাচ্ছে না। বরং মুন্সীগঞ্জ শহরের লোকজনকে দেখা যাচ্ছে। এই নিয়েও ভোটারদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

চেতনালীগের নেতা মজিবুর রহমান পূর্বপাড় থেকে এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তার প্রতীক হচ্ছে মোটর সাইকেল। এবারের নির্বাচনে তিনি নতুন মুখ। এলাকায় তার নির্বাচনী প্রচারনা ও পোস্টার দেখা যায়নি।

ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে দেলোয়ার হোসেন নির্বাচনে অংশ নিলোও তার নির্বাচনী প্রচারণা ও কোনো পোস্টার দেখা যায়নি।

বিক্রমপুর সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.