নাদিম মাহমুদ: প্রমত্তা পদ্মার বুক চিড়ে একে একে দাঁড়াচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু পিলার। দেশি-বিদেশি হাজারও মানুষের ঘামে-শ্রমে নিখুঁত কলাকৌশলে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ সেতুর নির্মাণ কর্মযজ্ঞ। তাই তো এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রুপ নিচ্ছে দেশের দক্ষিণবঙ্গের মানুষের বহুল কাঙ্খিত এ সেতু। প্রবল স্্েরাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হলেও নির্ধারিত সময়েই ধাপে ধাপে কাজ শেষ করতে হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও মাদারীপুরের কাওড়াকান্দিতে এখন চলছে পদ্মা সেতুর মহাকর্মযজ্ঞ। এক দুই করে এ পর্যন্ত ১১ টি পাইলের কাজ শেষ করেছে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি।
যেদিকে চোখ যায়, শুধুই নির্মাণযজ্ঞ। পদ্মা সেতুকে ঘিরে ঐ এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকার ধরন-ধারণও পাল্টে যেতে শুরু করেছে। প্রকল্প এলাকায় ভিটে হারানো মানুষগুলোর ঠিকানা হচ্ছে এখন পুনর্বাসন কেন্দ্র। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে ভিটেহারা মানুষকে। তবে ক্ষতিগ্রস্তরা বলেছেন, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেলেও নিরাপত্তাহীনতা এবং দীর্ঘ মেয়াদে জমির মালিকানা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করছে তাদের মধ্যে।
এ দিকে পদ্মায় ¯্রােত বাড়ার সঙ্গে নদী ভাঙ্গন রোধেও নেয়া হচ্ছে নানা ব্যবস্থা। পদ্মাসেতু কৃর্তপক্ষ মাওয়া পুরনো ফেরিঘাট থেকে কান্দিপাড়া পর্যন্ত ১৩শ’ মিটার এলাকায় নদী ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। আর এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯২ কোটি টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এরই মধ্যে এই খাতে দেয়া হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। এ দিকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ইতিমধ্যেই এই এলাকায় প্রায় ১ লাখ জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে।
এদিকে মাওয়া প্রান্তে পদ্মাসেতুর নদী শাসনের ডাম্পিং শেষ হওয়ার কথা ছিল ৩০ মে। মূল পদ্মা বহমান এখন মাওয়ার দিকে। তাই প্রবল ¯্রােতের কারণে নদী শাসনের কাজ চলছে অপেক্ষাকৃত কম ¯্রাোত এলাকা কাওড়াকান্দি এবং কাঠালবাড়ি এলাকায়।
এ দিকে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার নদী শাসনের পরিকল্পনা ছিল মাওয়া প্রান্তে। পদ্মায় প্রবল ¯্রােতের কারনে এটি কমিয়ে এখন দেড় কিলোমিটার করা হয়েছে। অপর দিকে জাজিরার দিকে সাড়ে ১২ কিলোমিটার এলাকায় নদী শাসনের কাজ এগিয়ে চলছে।
সেতু ঘিরে নতুন সম্ভাবনা
এদিকে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ের সেতুটি ঘিরে নতুন নতুন সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিতলবিশিষ্ট এই সেতু শুধু দেশের দক্ষিণ ও পঞ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা নয়, গোটা দেশের ভাগ্য বদলে দিবে এমন আশা নিয়েই শ্রমিকরা কাজ করছে। আর দক্ষিণ-পঞ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে আরও আধুনিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠার অপার সম্ভাবনা দৃশ্যমান হচ্ছে। সেই সাথে এই সেতুর পাশেই পদ্মার চরে অলিম্পিক ভিলেজ করার পরিকল্পনা এগিয়ে চলেছে। এছাড়া হংকং ও সিংঙ্গাপুরের আদলে শহর তৈরিরও পরিকল্পনা জোরে সোরে চলছে।
অপর দিকে প্রায় শেষ হয়ে এসেছে দুই প্রান্তের এপ্রোচ সড়কের কাজ। এ পর্যন্ত মাওয়ার দিকে ৯০ ভাগ এবং জাজিরা প্রান্তে ৭০ ভাগ সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী মো:শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, মাওয়া প্রান্তের কাজ আগামী মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি। আর জাজিরা প্রান্তের কাজ শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরে।
তিনি বলেন, মূল সেতুর কাজ শেষ হওয়ার প্রায় দুই বছর আগেই এপ্রোচ সড়কের কাজ শেষ হয়ে আসায় জাজিরা পয়েন্টটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
ওবায়দুল কাদেরের ১৫০ বার
পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ ঘুরে দেখার জন্য সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে ১৫০ বারের বেশি পরিদর্শন করেছেন বলে জানা গেছে।
ঢাকাটাইমস
Leave a Reply