সংসারের চাকা ঘুরে মৌসুমীর আয়ে

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল: মেয়েটির বয়স আনুমানিক ২১ বছর। কিন্তু সামনাসামনি দেখলে যে কেউ ভাববেন বয়স খুব বেশি হলে তের কি চৌদ্দ বছর। হুইল চেয়ারে বসে বসে কাটছে মৌসুমীর নিত্যদিন। তিনি একজন বাক প্রতিবন্ধী। কথা বলতে পারেন না, হাত ও পা নাড়তে পারেন না। কিন্তু মৌসুমীর আয়েই ঘুরছে তাদের সংসারের চাকা।

আজ (শুক্রবার) দুপুর ১২টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পলাশী মোড় থেকে মা সালমা বেগমের সঙ্গে হুইল চেয়ারে বসে মৌসুমী আজিমপুর বাসষ্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলেন। হুইল চেয়ার থেকে যেন মেয়ে মাটিতে পড়ে না যায় সে জন্য কাপড় দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখতে দেখা গেল।

প্রখর খরতাপে বিশেষ ভঙ্গিতে হাত পা নেড়ে চিৎকার চেঁচামেচি করছিলেন মৌসুমী। মা সালমা বেগম খাবারের একটি প্যাকেট দেখিয়ে একটু পরেই খাওয়াবেন বলে সান্ত্বনা দিলেও কোন কিছুতেই হৈচৈ বন্ধ করতে চাইছিলেন না মেয়েটি।
কৌতুহলবশত কারণ জানতে চাইলে সালমা বেগম জানান, মেয়েটি রোদেও তাপ একেবারেই সহ্য করতে পারেন না। শীত বা বৃষ্টি মৌসুমে তার সমস্যা না হলেও গরম একটু বেশী লাগলেই বিশেষ ভঙ্গিতে কাঁদতে থাকেন।

মুন্সীগঞ্জ জেলার ভাসানচর গ্রামের সালমা বেগম জানান, জম্মের দুই মাসের মাথায় তার রিকশাচালক স্বামী প্রতিবন্ধী মেয়ে জম্ম দেয়ায় তাকে ছেড়ে চলে যায়। বাবা ছেড়ে গেলেও মা হয়ে তাকে ছেড়ে যেতে পারেননি। মৌসুমীকে নিয়ে তার জীবন সংগ্রাম শুরু হয়।

সালমা বেগম জানান, ছোটবেলায় মৌসুমীকে তার নানীর কাছে রেখে বাসাবাড়ির কাজ করতেন। পরবর্তীতে গার্মেন্টে চাকরি করে সংসার চালাতেন। দুই বছর আগে মৌসুমীর নানী মারা গেলে তাকে দেখভাল করতে গার্মেন্টের চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন সালমা।

সংসার কিভাবে চালাবেন চিন্তায় পড়ে যান সালমা। পরিচিতজনদের পরামর্শে একটি হুইল চেয়ার কিনে ভিক্ষা করতে নেমে পড়েন রাস্তায়। লালবাগ কিল্লার মোড়ের বাসা থেকে সকালে বের হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেন। সালমা বেগম জানান, রাস্তায় যত বেশী ঘুরতে পারেন তত বেশী রোজগার। মেয়ের বদৌলতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার করেন। এ দিয়েই চলছে তার সংসার।

জাগো নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.