রহমতগঞ্জ মাঠ কাঁপাচ্ছে ‘মীর কাদিমের গাভী’

পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ। এ মাঠে বসেছে কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাট। হাটের প্রধান আকর্ষণ মুন্সীগঞ্জের ‘মীর কাদিমের গাভী’। রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে ৩০০ থেকে ৩৫০টি গাভী হাটে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন আকারের এসব গাভীর অধিকাংশের গায়ের রঙ ধবধবে সাদা। তবে কিছু রয়েছে লালচে রঙের। সব গাভীরই সিং খাড়া, চোখ কাজল কালো, তুলতুলে শরীর।

হাটে অন্যান্য গরুর তুলনায় মীর কাদিমের গাভীর দাম আকাশচুম্বী। চার মণ মাংস পাওয়া যাবে এমন একটি গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। তারপরও মীর কাদিমের গাভী নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে রহমতগঞ্জ মাঠে।

মুন্সীগঞ্জের মীর কাদিম পৌরসভার রিকাবি বাজার থেকে চারটি গরু রহমতগঞ্জ হাটে তুলেছেন রফিকুল ইসলাম। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দু’টি গরু বিক্রি করেছেন তিনি।

রফিকুল ইসলাম বলেন, মীর কাদিম থেকে আমরা আজ হাটে এসেছি প্রায় ১৫০ জন। ৩০০ থেকে ৩৫০টি গরু হাটে নিয়ে আসা হয়েছে। আমি চারটি গরু নিয়ে এসেছি, এর মধ্যে দু’টি বিক্রি হয়েছে। সবাই গরুগুলো বিক্রি করে আজই বাড়ি ফিরবো। গরু নিয়ে আমাদের হাটে বসে থাকতে হয় না।

রহমতগঞ্জ মাঠে মীর কাদিমের গাভী নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের টানাটানি শুরু হয়েছে। যে কারণে দামও হাঁকা হচ্ছে। এ হাটের সব ক্রেতাই পুরান ঢাকার। চাহিদার তুলনায় হাটে মীর কাদিমের গাভী এবার কম এসেছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার থেকে মীর কাদিমের গরু কিনতে এসেছেন মানিক ফয়সাল। জন্ম থেকেই তিনি দেখছেন পরিবারের সদস্যরা মীর কাদিমের গাভী কোরবানি দিয়ে আসছেন।

ফয়সাল বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাবা, দাদা সবাই এ গাভী কোরবানি দিয়ে আসছেন। সেই সুবাদে আমিও মীর কাদিমের গাভী কোরবানি দেওয়ার জন্য রহমতগঞ্জে এসেছি। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার এ ধরনের গাভীর দাম অনেক বেশি। এখন হাটে এ গাভী কম ওঠে।

মীর কাদিমের গাভী ছাড়া পুরান ঢাকাবাসীর কোরবানির ঈদ জমে না। তাই যত দামই হোক, এ গাভী কিনে ঘরে ফেরেন সবাই।

সাদা রঙের মীর কাদিমের গাভী কিনে ফিরছেন লালবাগের বাসিন্দা আশরাফ সিদ্দিকী। ছয় মণ মাংস পাওয়া যাবে এমন আশায় গাভীটি এক লাখ ৮০ হাজার টাকায় কিনেছেন তিনি।

আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, ছোটবেলা থেইক্কা দেইক্কা আইতাছি বাপ-দাদায় মীর কাদিমের গাভী কোরবানি দিতাছে। সেই সঙ্গে আমরাও মীর কাদিমের গাভী কোরবানি দিতাছি। দাম যাই হোক এ গাভী কোরবানি দিবার চাই।

নগরীর একমাত্র রহমতগঞ্জ মাঠেই পাওয়া যায় মীর কাদিমের গাভী। খামারিরা জানান, নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করা হয় এসব গরু। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, মশা-মাছি স্পর্শ করতে দেওয়া হয়না এসব গরুকে। নির্দিষ্ট তাপমাত্রার মধ্যে রাখা হয়। গম, চাল, খৈল, ভূষি, খড়, ধানের কুড়া খাওয়ানো হয়।

মীর কাদিমের খামারি দীন ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গরুকে খামারে লালন-পালন করি। সবসময় দানাদার খাবার খাওয়াই। কোনো ধরনের কাঁচা ঘাস দেওয়া হয় না। ফলে মাংসের স্বাদ হয় ভালো।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.