মোঃ রুবেল ইসলাম: পৃথিবীর মানুষের জন্য বাসযোগ্য করে তুলতে পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানোর কোন বিকল্প নেই। এ সমাজে গাছখেকো, বনখেকোরা যখন তাদের হীন উদ্দেশ্যে পরিবেশ বিপর্যস্ত করে তুলছে তখন সিরাজদিখানের কুসুমপুরের এক ভেষজ বিজ্ঞনী বিরল ভালোবাসার ঘটনা নি:সন্দেহে বিক্রমপুরীদের মনে আশা জাগিয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে মা মাটি, মানুষকে ভালোবেসে নিজের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে মনোমুগ্ধকর নির্মাণ শৈলি দিয়ে তৈরি করেছেন সেঁওতি বাগান। যেখানে মুহুর্তেই নিজেকে সতেজ করে দেয়। সবুজের সাথে লুকোচুরি, মেঘের সন্ধির অপুর্ব দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। বাগানের দৃষ্টি নন্দন ছাউনিতলা আর পাখির কিচিমিচির শব্দ বিনোদন প্রেমিদের চাঙ্গা করে তুলবে। জীবনের গতিহীন একপেশে ক্লান্তিময় জীবন ভরিয়ে দেবে আনন্দের ছোঁয়া। হরেক গাছপালায় ভরা বাংলাদেশে অল্প যে কটি সবুজ অরণ্য আছে তার মধ্যে সেঁওতি বাগান একটি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে বহু দেশি-বিদেশির আগমন ঘটেছে এর শোভা দর্শনের প্রত্যাশায়।
বাগানের আর্কষণীয় মনোরম দৃশ্য ধারণ করতে ছুটে আসছে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স চ্যানেল, টেলি ফিল্ম, চলচ্চিত্র নির্মাতারা। সুটিং হচ্ছে নানা ছবি, টেলিফিল্মের। দলবেঁধে বিনোদন পিপাসুরা ছুটে আসছে এই স্পটে। ১৫০ শতাংশ জমির উপর গড়ে তোলা এ বাগানে প্রায় ২০০ প্রজাতির ৫ হাজার গাছ আছে। বাগানের দুই পাশ দিয়ে একে বেকে চলে গেছে ট্রাঙ্ক রোড যা বাগানের আকর্ষনীয় অনুষঙ্গ হিসেবে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। নানা আকৃতির সুন্দর শৈল্পিক পথ হাজার হাজার নারিকেল, খেজুর, ঝাউ, পেয়ারা ও সুপারি গাছ বাগানটি ঘিরে রেখেছে। আছে ক্যাকটাস, জাফরান, অর্জুন, হরতকি, কদম, চালতা, এলাচি, ড্রাগন, রামবুটান, ডুরিয়ান, পার্সিমন, খাকি, সৌদিয়ান খেজুর, চেরি, পেশন, লোহা কাঠ, দেশি-বিদেশী ৩০ প্রজাতির আম, লটকনসহ দুর্লভ প্রজাতির অনেক উদ্ভিদ।
বাগাটি নয়নাভিরাম করার জন্য গোলাপ, গন্ধরাজ, টগর, কামিনী, হাসনাহেনা বকুল, জুঁই বেলি, জবাসহ দেশি-বিদেশি বাহারি ফুলের গাছ। এখানে কারিপাতা নামের এক ধরনের গাছ আছে। দুর্লভ প্রজাতির এ গাছের পাতা বিভিন্ন তরি-তরকারিতে দিয়ে রান্না করা হয়। এছাড়া আছে আবগাদো। এ বাগানের পুকুরে নৌকায় চড়ে বড়শি দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরার ব্যবস্থা রয়েছে। হেলানো কৃষ্ণচূড়ার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় পুকুর পাড় ঘেঁষে লাল-সাদা-কুমুদ আর জলকলমির ফুটন্ত ফুলের ভাসন্ত বাগান। পাশেই ছাওনি তলায় বসে বিশ্রাম নিয়ে দেখা যায় কচুরি পানার জঙ্গলের উপর শিকারের অপেক্ষায় ঢ্যাঙ ঢ্যাঙা ঠ্যাং নিয়ে দাড়িয়ে আছে সাদা আর ধবল বক। পানকড়ির মাছ শিকার, উপরে গাঙচিল উড়া এ এক ভিন্ন পরিবেশ।
সবুজ বনানী অনিন্দ্য সুন্দর রূপ ধারণ করায় আগত অতিথিরা আনন্দ উপভোগ করেছে। বিচিত্র পাখির কল-কাকলি আর বিনোদন প্রেমীদের পদভারে মুখর হয়ে উঠেছে বাগানের সার্বিক পরিবেশ। এ বাগানের বিশেষত্বে ঘুড়ে গেছেন ডাঃ বি. চৌধুরী, সৈয়দ আবুল মকসুদ, মোঃ জাকারিয়া পিন্টু, শিল্পী মমতাজ, নূহ-উল-আলম লেনিন, ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন, ২ বাংলার শতাধিক কবিসহ অসংখ্য গুণিজন।
এ বাগানে সার্বিক পরামর্শ দিয়ে থাকেন সিরাজদিখান উপজেলার উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোশারফ হোসেন। আইএফসির প্রতিষ্ঠাতা প্রকৃতিপ্রেমী সৈয়দ টিপু সুলতান ১৯৯০ সালে এ বাগান প্রতিষ্ঠা করেন। যে মানুষটি অনেক সমাজ কল্যাণ মূলক সংগঠন পরিচালনার পাশাপাশি আজ ও আগামির জন্য এত কিছু করেছেন তার পাশে কি সরকার কিংবা সমাজপতিরা এগিয়ে আসতে পারেন না। সিরাজদিখান প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক কে এন ইসলাম বাবুল বলেন, এটি নি:সন্দেহে দেশ ও দশের কল্যাণ বয়ে আনবে।
মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর লেখক ফোরামের সভাপতি আশরাফ ইকবাল বলেন, নিজ উদ্যোগে এ ধরনের সমৃদ্ধ ভেষজ, ফলদ ও ফুল গাছের বাগান করা সত্যিই বিরল। তাছাড়া কবি সাহিত্যিকদের আড্ডার জন্য মনোরম পরিবেশ আছে এ বাগানে। বাগান কর্তৃপক্ষ মাসিক বিক্রমপুরের সম্পাদক সৈয়দ মাহমুদ হাসান মুকুট সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, এ বাগান যে কাউকে আকৃষ্ট করতে পারে।
সময়ের কন্ঠস্বর
Leave a Reply