বিলুপ্তির পথে মুন্সীগঞ্জের মৃৎশিল্প

সুজন: মুন্সীগঞ্জ জেলার ৬ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পেশা বদল করছে মৃতশিল্পীরা। উপজেলার গ্রামের কুমাররা এখন জিবীকার নির্বহের জন্য অন্য পেশায় অগ্রহী হয়ে পড়ছে। কেননা এ পেশায় কাজ করে তাদের সংসারে খরচ বহন করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। আধুনিকতার ছোয়ায় তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় মাটির তৈরি হাড়ি পাতিলের চাহিদা ক্রমেই কমে আসছে বলে যানান এলাকার একধীক কুমার শিল্পীরা।

এক সময় এ পেশায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কুমার শিল্পীরা হরেক রকম মাটির জিনিস তৈরির করতেন পুরুষের পাশাপাশি এ কাজ করছেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও। কাজ চলছে কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত। তবে আধুনিকতার আগ্রাসনে এখন এ কাজে তেমন লাভ নেই। পেটের দায়ে এবং বাপ-ঠাকুরদার দীর্ঘ দিনের পেশাকে টিকিয়ে রাখতে এখনও এ পেশাকে আকড়ে ধরে রেখেছেন তারা। জেলার সিরাজদিখান উপজেলার ষোলঘর কুমারপাড়ায় দীর্ঘ প্রায় দুইশত বছর আগে থেকে মাটির তৈরি নানা উপকরন তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতো কয়েকশত পরিবার।

এক সময় এগুলোর খুব কদর থাকলেও এখন শুধু পৌষ পার্বন ও বৈশাখী মেলাতে এসব উপকরনের কিছুটা চাহিদা রয়েছে। এটি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ১৭৮টি গ্রামের চিত্র। এ গ্রামে মৃৎ শিল্পের ইতিহাস শত বছরের এক সময় এখানকার কুমারদের সুনিপুণ হাতে তৈরি মাটির জিনিসপত্রের ব্যাপক চাহিদা ছিল। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাশের জেলাগুলোর হাটবাজারেও বিক্রি হতো এখানকার তৈরি জিনিসপত্র। কিন্তু কালের বিবর্তনে মাটির তৈরি হাড়ি পাতিলের চাহিদা কমতে থাকে। তার জায়গা দখল করে নেয় অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিক- মেলামাইন ও সিলবারের সামগ্রী।

এক সময়ের রান্নাঘরের হাড়ি, কড়াই, বদনা, ঢাকুন, ফুলের টব, কলস, পিঠার ছাচ, মুড়ি ভাজার সামগ্রী তৈরি করে গৃহস্থলির চাহিদা মেটানো সেই সব কুমারদের অধিকাংশেরই চাকা (মাটির সামগ্রী তৈরি করা যন্ত্র) বন্ধ হয়ে গেছে। এসব পরিবারের শতাধিক সদস্য এখনও মাটির তৈরি জিনিসপত্র নিজ হাতে বানিয়ে বাজারে বিক্রয় করে সংসার চালায়। তবে প্লাস্টিকের তৈরি আধুনিক জিনিসপত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কদর কমেছে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের। তাই বেকার হয়ে পড়েছে মাটির কারিগররা। এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কুমারদের অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে ফেলেছে। এখন তাদের কেউ স্বনের কাজ, বিদেশে, কেউবা কামারের কাজ করছে।

জানা যায়, এ গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে দিনরাত ঘুরছে কুমারের চাকা। কেউ মাটিতে পানি মিশিয়ে কাঁদা নরম করছে, কেউ মাটির তৈরি জিনিস রোদে শোকানোর কাজ করছে। আবার আনেকের মনোযোগ পোড়ানো জিনিসপত্রে রং-তুলির কাজ করছে।

সিরাজদিখান উপজেলার একাধীক কুমারদের সাথে কথা বলে যানাযায় ,এ পেশায় তাদের পূর্ব পুরুষরা কর্মরত ছিলেন তারাও পূর্ব পুূরুষের ঐতিয্য ধরে রাখার জন্য কাজ এখন ও জীবিকা নির্বহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে চৈত্র- বৈশাখ এ দু মাসে রোদের তেজ বেশি থাকায় তাদের কাজও বেশি হয়। তাই বেকার না থেকে পাশাপাশি অন্য কাজ করার চালিয়ে যাচ্ছি।

মন্টু পাল দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এ পেশায় এখন আর লাভ নেই। অন্য কোন কাজ জানিনা। তাই বাপ দাদার পেশাকে কোন রকমের আঁকড়ে ধরে আছি মাত্র। তবে সরকার যদি আমাদের মাটির কাজকে একটু প্রাধান্য দিয়ে মাটির তৈরি জিনিসের দামটা একটু বারতো এবং প্লস্টিকের পন্যকে কমিয়ে বাজারে স্থান দিতো তাহলে এই মাটির শিল্পটি বাংলাদেশে টিকিয়ে রাখা যেতো। মনে করেন দেশের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতার হাত বাড়ানো উচি।

স্বাধীনবাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.