সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং মানিক চৌধুরী স্মরণে শোকসভা

রাহমান মনি: অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং জাতীয় সংসদের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং দীর্ঘদিন জাপান প্রবাসী এবং জাপান আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মানিক চৌধুরীর অকাল মৃত্যুতে তাদের স্মরণে জাপান আওয়ামী লীগ এক শোকসভার আয়োজন করে।

স্বল্প সময়ের নোটিসে অভূতপূর্ব সাড়া দিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নেতাকর্মীরা হাজির হন টোকিওর কিতা-সিটি তাকিনোগাওয়া বুনকা সেন্টারে। শোকসভায় ছিল না কোনো মঞ্চ, ছিলেন না কোনো সভাপতি বা সঞ্চালক।

জাপান আওয়ামী লীগের সভাপতি সালেহ্ মো. আরিফ নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে উভয়ের কর্মজীবনের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করার পর সবাইকে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের আহ্বান জানান। এরপর তিনি সভা উন্মুক্ত ঘোষণা দিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং মানিক চৌধুরীর জীবন আলেখ্য স্মৃতিচারণ বা বক্তব্য রাখার জন্য অনুরোধ জানান।

মৃতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাপান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আসলাম হিরা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাদল চাকলাদার, জহিরুল হক, মোল্লা অহিদুল ইসলাম, মাসুদ পারভেজ, ডা. খলিলুর রহমান, নাজমুল হোসেন রতন, সনৎ বড়–য়া, চৌধুরী সফিউর রহমান লিটন, হারুন উর-রশীদ, আব্দুল কুদ্দুস, মো. সাজাহান আলামীন, মো. ফারুক, ডা. সামী, জুয়েল আহসান কামরুল এবং রাসেল মাঝি প্রমুখ।

বক্তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু জমিদার পরিবারে জন্ম নেয়া, ষাটের দশকের উত্তাল রাজনীতি থেকে উঠে আসা, সত্তরের প্রাদেশিক পরিষদের অন্যতম কনিষ্ঠ সদস্য, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ সদস্যসহ দীর্ঘ চার দশকের প্রায় সব সংসদে (মোট ৭ বার)-ই নির্বাচিত সংসদ সদস্য বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য, একজন ঝানু পার্লামেন্টারিয়ান, বর্ষীয়ান নেতা, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত দল এবং নেত্রীর প্রতি অবিচল ছিলেন উল্লেখ করে বলেন, ছোট দলের বড় নেতা হিসেবে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন।

তারা আরও বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ৫নং সেক্টরে সাব-কমান্ডার এই মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনীতিবিদ ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংসদে গণতন্ত্রী পার্টি থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন। পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং একজন স্পষ্টবাদী ও সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে আদর্শ বিচ্যুত হননি। প্রয়োজনে দলের জন্য গঠনমূলক সমালোচনা করতেও দ্বিধাবোধ করেননি। তার এই স্পষ্টবাদিতার জন্য সমালোচিতও হতে হয়েছে প্রচুর। তিনি যখন সংসদে কথা বলতেন সবাই তখন মনোমুগ্ধ হয়ে শুনতেন। তিনি ছিলেন দেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য।

দীর্ঘদিন জাপান প্রবাসী, আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ মানিক চৌধুরীর স্মৃতিচারণ করে বক্তারা বলেন, পরোপকারী, নির্লোভ মানিক চৌধুরী ছিলেন জাপান আওয়ামী লীগের অন্যতম এক স্তম্ভ। পদের জন্য তিনি কোনো দিন দল করেননি এবং দলে অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড নেতাদের সমালোচনায় কখনো পিছপা হননি। তার এই অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত এবং সহযোদ্ধা বড় ভাইকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ। তার অভাব পূরণীয় নয়। প্রবাসী বাংলাদেশিদের যে কোনো প্রয়োজনে সবার আগে মানিক ভাইকে পাওয়া যেত।

উল্লেখ্য, ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ ফেব্র“য়ারি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং ২২ জানুয়ারি একই হাসপাতালে জাপান প্রবাসী মানিক চৌধুরী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

rahmanmoni@gmail.com

সাপ্তাহিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.