চিকিৎসার নামে চলছে কমিশন বাণিজ্য!

মুন্সীগঞ্জ শহর ও আশপাশ এলাকায় গড়ে ওঠা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড প্যাথলজিক্যাল সেন্টারগুলোতে চলছে চিকিৎসার নামে কমিশন বাণিজ্যের ব্যবসা। এ জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও দালালদেরই দায়ী করছে সচেতন মহল। তারা মনে করছেন, তাদের কমিশন বাণিজ্যের কারণে দিন দিন এসব ব্যবসা জমজমাট হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতালে ও ডাক্তার চেম্বারে চিকিৎসা নিতে গেলে দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীদের প্রয়োজন ছাড়াই রক্ত, প্রস্রাব পরীক্ষা, আলট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বলে দেওয়া হচ্ছে, কোন প্রতিষ্ঠানে এ পরীক্ষাগুলো করতে হবে। তাই রোগীরা ডাক্তারের নির্দেশিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ সুযোগে ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড প্যাথলজিক্যাল সেন্টারগুলোর মালিকপক্ষ রোগীদের কাছ থেকে এর নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সেই টাকা থেকে যেসব ডাক্তার, নার্স ও দালাল রোগী পাঠাচ্ছে, তাদের জন্য থাকছে নির্ধারিত কমিশন। ফলে সরকারি স্বাস্থ্যনীতির তোয়াক্কা না করে নানা অনিয়মের মধ্যে পরিচালিত বেসরকারি মালিকানাধীন এসব প্রতিষ্ঠান বর্তমানে পরিণত হয়েছে চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল। খোদ ডাক্তাররাও এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে ও আশপাশ এলাকায় গড়ে উঠেছে ১০ থেকে ১২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিক। এর মধ্যে রয়েছে_ রেনেসাঁ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টার, লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্বপ্ননীড় ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এ প্লাস ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আমেনা মোল্লা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মডার্ন ক্লিনিক, ডক্টরস ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্কয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এ আর ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। জেনারেল হাসপাতালের শয্যা সংকট ও চিকিৎসাসেবায় অব্যবস্থাপনার সুযোগে অনেক রোগীকে দালালদের প্ররোচনায় স্বজনরা হাসপাতাল থেকে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ জ্বর বা পেট ব্যথা নিয়ে কোনো রোগী হাজির হলেও কয়েক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত পুরুষ ও মহিলা দালালরা প্রতিদিন সকাল থেকে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে প্রতিটি ডাক্তারের রুম ও এর বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের কাজ হলো সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ফুসলিয়ে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া।

মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মু. সিদ্দিকুর রহমান সমকালকে বলেন, অভিযোগ একেবারে অসত্য এ কথা বলব না। ভালো লোকের পাশাপাশি সব জায়গায় কিছু অসৎ ও ধান্ধাবাজ লোক থাকে। তারপরও হাসপাতালে দালাল নিয়ন্ত্রণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিছুদিন আগেও দুইজনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।

সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.