পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে বসতে যাচ্ছে আরো একটি স্প্যান। মঙ্গলবার সকালে সাড়ে ৮টায় মুন্সীগঞ্জের কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়াড থেকে জাহাজে করে স্প্যানটি জাজিরার উদ্দেশ্যে রওনা করা হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল বুধবার এটি জাজিরা প্রান্তের ৩৬ ও ২৭ নং পিলারের উপর বসানো হবে। এটি হবে জাজিরা প্রন্তের ৬ষ্ঠ স্প্যান। এছাড়াও মাওয়া প্রান্তে আরো একটি পিলার বসানো হয়েছে। এ নিয়ে জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর ৯০০ মিটার দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে। মাওয়া প্রান্তেরটিসহ দৃশ্যমান হবে এক হাজার ৫০ মিটার।
স্প্যানটি আরো পূর্বে বসানোর প্রস্তুতি ছিল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু নাব্য সঙ্কটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। নাব্যতা সংঙ্কটের কারণে প্রায় তিন হাজার টন ওজনের স্প্যান নিয়ে বিশাল ভাসমান ক্র্যানটি যাওয়ার মত পানি নদীতে ছিলনা। এই তথ্যদিয়ে প্রকৌশলীগণ জানিয়েছেন, বেশ কিছু দিন ধরে দিনরাত পদ্মা সেতুর চ্যানেলে নাব্যতা ফেরাতে ড্রেজিং করা হয়েছে। চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানীর তিনটি ড্রেজার এবং স্থানীয় আরও চারটি ড্রেজারসহ সাতটি ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করে পদ্মায় নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
এই রিপোর্ট লেখার সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় এটি ১৭ নম্বর খুঁটি অতিক্রম করছিল। আরও প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরের ৩৬ নম্বর খুঁটির কাছে এটি নোঙ্গর করা হবে। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে গন্তব্যের দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। সেই অনুযায়ী চার ঘন্টায় অর্ধেক রাস্তা অতিক্রম সম্ভব হয়েছে।
দায়িত্বশীল এক প্রকৌশলী জানান, মাঝেরচর নামের বিশাল চল কেটে সেতুর জন্য যে চ্যানেল করা হয়েছিল, তার প্রায় পুরোটাতে ব্যাপকভাবে পলি জমেছিল। একরকম নতুন করে চ্যানেল কাটার মতই আবার ড্রেজিং করতে হয়েছে। অব্যাহত ড্রেজিংয়েও চ্যানেলটিতে নাব্যতা ফিরে না আশার কারণে মধ্য জানুয়ারিতে যে ৬এফ নম্বর স্প্যান স্থাপানের কথা ছিল, তা সম্ভব হয়নি। এখন নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাই ৬ষ্ঠ স্প্যান বসানো শুরু হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে আরো স্প্যান বসানো হবে।
এর পূর্বে গত ১৫ জানুয়ারী পদ্মা সেতুর সর্বশেষ পিলারটির নকশা অনুমোদনের মধ্য দিয়ে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়েছে পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে। সেতু নির্মাণে আর কোন জটিলতা এখন আর নেই। পদ্মা নদীর নীচে মাটির নানা বৈচিত্রতার কারণে বেশ কিছু খুঁটির নাকশায় পরিবর্তণ আনতে হয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে। সঠিক ও যোগ্য পরিমাপের মাটির স্তর না পাওয়ায় এ পরিবর্তণ আনতে হয়। এতে অনেক স্থানে খুঁটির গভীরতা কমাতে বাড়াতে হয়েছে। তা করতে গিয়ে নকশার পরিবর্তণ ঘটাতে হয়। এতে করে চুড়ান্ত নকশার অনুমোদন পেতে কিছুটা সময় লাগে। তবে সকল সমস্যার অবসান ঘটিয়ে সকল নকশারই অনুমোদন হয়েছে। সবার আগে শুরু হওয়া সেতুটির মাওয়া প্রান্তে ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটির নকশা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জও সফল সমাপ্তি হয়েছে। এখন মাওয়া প্রান্তে পুরোদমে কাজ শুরু হচ্ছে। মাওয়া প্রান্তেই রয়েছে মূল পদ্মা নদী। বর্ষায় খরস্রোতা মাওয়া প্রান্তে কাজ করতে আনেকটা চ্যালেঞ্চের মুখে পড়তে হয়। এখন শুষ্ক মৌসুম তাই এ প্রান্তে কাজ করার এটাই উপযোগি সময়। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে এ প্রান্তের সকল খুটির পাইলিং শেষ করে পিলার নির্মাণের উপর জোর দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। সেতুর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর ৫টি ¯প্যান বসানোর মাধ্যমে জাজিরা প্রান্তে পৌনে ১ কিলোমিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। আর এই ৬ষ্ঠ (এফ ৬) স্প্যানটি বসানোর পরে সেতুটির ঐ অংশে ৯শ’ মিটার দৃশ্যমান হবে।
এছাড়া মাওয়া প্রান্তের ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) ‘ওয়ান এফ’ আপাতত সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর রাখা হয়েছে।
জনকন্ঠ
Leave a Reply