যদি একদিন: আলোচনায় তাহসানের কন্যা রাইসা

বাবা-কন্যার রসায়ন নিয়ে নির্মিত ‘যদি একদিন’ চলচ্চিত্রে সাবলীল অভিনয় করে আলোচনায় উঠে এসেছেন শিশুশিল্পী রাইসা।

নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজের এ চলচ্চিত্রে অভিনেতা তাহসানের কন্যা ‘রূপকথা’র চরিত্রে অভিনয় করেন রাইসা; যার পুরো নাম আফরিন শিখা রাইসা। সবে এগারো বছরে পা দেওয়া এ শিশুশিল্পী রাজধানীর আজিমপুরের গ্রীন ল্যান্ড মডেল স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন।

এর আগে বেশকিছু বিজ্ঞাপনচিত্র ও টিভিনাটকে অভিনয় করলেও এবারই বড়পর্দায় অভিষেক হলো তার। শুক্রবার ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। তাহসান, শ্রাবন্তী, তাসকিনের মতো অভিনয়শিল্পীর ভিড়েও নিজের সপ্রভিত অবস্থান জানান দিয়েছেন।

চলচ্চিত্রে বাবা-কন্যার খুনসুটি, আবেগ, সুখ-দুঃখগাঁথা ছুঁয়ে গেছে দর্শকদের; ফেইসবুকেও চলছে রাইসা-বন্দনা।

ছবি: ফেইসবুক থেকে নেওয়া। ছবি: ফেইসবুক থেকে নেওয়া। দর্শকদের এই মুঠি মুঠি ভালোলাগা অনুভব করছেন তিনিও।
গ্লিটজকে রাইসা বলেন, “স্বপ্নের মতো লাগছে সবকিছু। ভাবতেই পারিনি, দর্শকদের কাছ থেকে এতটা সাড়া পাবো। চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা রইল।”

কন্যার তারকাখ্যাতির সুবাদে বাবা-মাকেও এলাকাবাসী আলাদাভাবে চিনছেন।

রাইসার মা রোখসানা বেগম গ্লিটজকে বলেন, “ছেলে-মেয়েরা পরিচিত হয় মূলত বাবা-মার পরিচয়ে; কিন্তু মেয়ের পরিচয়ে মানুষজন আমাদের চিনছে- এটা আমাদের জন্য গর্বের।”

২০১৭ সালের শেষভাগে রাইসা এ চলচ্চিত্রে ডাক পান বলে জানান তার মা।

তিনি জানান, আরটিভিতে প্রচারিত সাগর জাহানের ‘মাখন মিয়ার উদার বউটা’ নাটকে রাইসার অভিনয় দেখে পরিচালক মোস্তফা কামাল রাজ ফোন করেন। তার অফিসে অডিশন শেষে তাকে নির্বাচিত করা হয়।

চরিত্রের প্রয়োজনে সেইদিনই রাইসাকে অফিসের ছাদে সাইকেল চালানো শেখান রাজ। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শুটিং শুরু হয়। স্কুলে ছুটির ফাঁকে শুটিং ছবির শুটিং শেষ করেন এ শিশুশিল্পী।

তার মা বলেন, “রাজ ভাইকে ‘মামা’ বলে ডাকে রাইসা। খুব আনন্দের সঙ্গে শুটিং করেছে। মনেই হয়নি এটা কোনও শুটিং; ও ভেবেছিল পরিবারের সঙ্গেই আছে।
“আমি তো শুটিং সেটে ছিলাম। কিছু কিছু দৃশ্যে রাইসার অভিনয় দেখে কান্না করতাম। শুধু আমি না, অনেকেই শুটিংয়ে কেঁদেছে।”

দর্শক হিসেবে ছবিটি দেখার পর দ্বিতীয়বারের মতো শুক্রবার কেঁদেছেন বলে জানান তিনি।

অভিনয়ে রাইসার অভিষেক ঘটে ২০১৫ সালে; নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর হাত ধরে। সুপার স্টার এলইডি বাল্বের বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন; রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে শোভা পেয়েছিল সেই বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড।

জীবনের প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে খানিকটা ভয় পেয়েছিলেন বলে জানান তার মা। “কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিল ও। বিজ্ঞাপনের শেষের দিকে যে কান্নার দৃশ্যটি ছিল সেটি একদম বাস্তব ছিল।”

এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে আরএফএল টেবিল ও টিফিন বক্সসহ বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন।

‘অচেনা মেঘের সন্ধানে’র মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো নাটকে অভিষেক ঘটেছিল তার। এরপর ‘সুখের ছাড়পত্র’, ‘মাখন মিয়ার উধাও বউ’সহ বেশ কয়েকটি নাটকে দেখা গেছে তাকে।

দুইভাই একবোনের মধ্যে রাইসা মেঝ। বড়ভাই আবির পড়াশোনা করেন দশম শ্রেণিতে আর ছোটভাইয়ের বয়স সবে চার। তার বাবা মো. আমিন পেশায় একজন ব্যবসায়ী, মা রোখসানা বেগম গৃহিনী।

মো. আমিন গ্লিটজকে জানান, তার ইচ্ছা পড়াশোনার পাশাপাশি তার মেয়ে অভিনয়ও করুক। ভালো অভিনেত্রী হোক।

অভিনয়ের ক্ষেত্রে মেয়েকে পরিবার থেকে সার্বিক সহযোগিতার কথা জানালেন তার মা। বললেন, “ওর ভেতর অভিনয়ের মেধাটা আছে, সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। ক্যামেরার সামনে গেলেই ও অন্য রাইসা হয়ে যায়। পরিবারের সহযোগিতাটা ওর জন্য খুব দরকার।”

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোথাও অভিনয় না শিখলেও নাচে-গানে আগ্রহ আছে তার। চলতি বছরই কোনও নাচের পাঠশালায় ভর্তি করে দেওয়া হবে এ অভিনয়শিল্পীকে।

অভিনয়ের বাইরে পড়াশোনায়ও বেশ মনোযোগী তিনি। পঞ্চম শ্রেণিতে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অভিনয় আর খেলাধুলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। যার সুবাদে স্কুলের দরোজায় পাশে রাইসার বড় একটি ছবি টাঙিয়ে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ; জানালেন তার মা।

অভিনয়ের ক্ষেত্রে তিনি আদর্শ মানেন অভিনয়শিল্পী নুসরাত ইমরোজ তিশাকে; যাকে ‘খালামনি’ বলে সম্বোধন করেন।

বড় হয়ে খালামনির মতো অভিনেত্রী হয়ে উঠার স্বপ্নের কথা জানালেন এ শিল্পী।

বিডিনিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.