মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের তুলশিখালী সেতু-সংলগ্ন গোয়ালিয়া, চিত্রকোট ও কামারকান্দা মৌজার ৩১০ একর জমিতে বড় পরিসরে হচ্ছে নতুন কেমিক্যাল পল্লী। এর আগে ঢাকার কেরানীগঞ্জে ৫০ একর ভূমিতে কেমিক্যাল পল্লীটি স্থাপনের কথা ছিল। কেমিক্যাল পল্লী স্থাপনে সংশোধনী প্রস্তাব গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তবে পুরান ঢাকার রাসায়নিক কারখানা ও
গুদাম আপাতত অস্থায়ী ভিত্তিতে সরিয়ে নেওয়া হবে ঢাকার শ্যামপুরে। এ লক্ষ্যে অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণ ও গুদাম নির্মাণে অন্য একটি প্রকল্পও গতকালের একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেকের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এসব তথ্য জানান। প্রকল্প দুটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পুরান ঢাকায় কোনো কেমিক্যাল গুদাম থাকতে পারবে না। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দিয়ে বিসিকের কেমিক্যাল পল্লীতে জমি বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। এ জমি যাতে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা না হয়, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলেছেন তিনি। এ দুই প্রকল্পসহ সব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে সমাপ্ত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ এতে মারা যান ৭১ জন। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে বর্তমান বৈধ ব্যবসায়ীদের বিপজ্জনক কেমিক্যাল কারখানা ও গুদাম সাময়িকভাবে সংরক্ষণের জন্য শ্যামপুরে উজালা ম্যাচ কারখানায় অস্থায়ী পল্লী স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় বিসিক। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি টাকা। আগামী এক বছরের মধ্যে শেষ করা হবে প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মাণ করা হবে ৫৪টি গুদাম।
২০১০ সালে নবাব কাটরার নিমতলীতে দুর্ঘটনার পর চার হাজার কেমিক্যাল কারখানা ও গোডাউন সরিয়ে নিতে কেরানীগঞ্জে স্থায়ী কেমিক্যাল পল্লী স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয় ১১৯ জন। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর ২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি অনুমোদন দেয় একনেক। এ কাজে এখনও পর্যন্ত কোনো অর্থই ব্যয় করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে গত ফেব্রুয়ারিতে পুরান ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর তুলনামূলক কম জনবহুল আবাসিক এলাকা এবং আরও বড় পরিসরে কেমিক্যাল পল্লী স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে কেরানীগঞ্জ থেকে বিসিক কেমিক্যাল পল্লী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মুন্সীগঞ্জে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
একনেক সভায় মোট ৭টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।
একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হলো- সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, সমাজকল্যাণ ভবন নির্মাণ, নীলফামারীর চাড়ালকাটা নদী সোজাকরণ এবং বুড়িতিস্তা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প।
সমকাল
Leave a Reply