মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় চলতে গেলেই দেখা মেলে কিছু অদ্ভুত সেতুর। কোন সেতুর রেলিং ভেঙ্গে খান খান, আবার কোন সেতুর সঙ্গে নেই সংযোগ সড়ক।
কেন এমন সেতু, তারও মেলেনা কোন উত্তর। মনে হয় কোন পরিকল্পনা ছাড়াই নির্মাণ হয়েছে এমন সেতু। আবার নেই কোন তদারকিরও ব্যাবস্থা।

টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সিংহের নন্দন খালে সেতুটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক নেই
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার কাঠাদিয়া শিমুলিয়ার ইউনিয়নের উত্তর শিমুলিয়া গ্রামের খালের ওপর করুণ চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি সেতু। উপজেলার আলদীবাজার-রহিমগঞ্জ বাজার সড়কের উপর এই সেতুটি নির্মিত হয়। তবে নির্মাণের পর প্রায় এক যুগ সেতুর রহিমগঞ্জ বাজার প্রান্তের সড়ক ছিল না। সবে মাত্র বছর তিনেক আগে আলদীবাজার-রহিমগঞ্জ বাজার সড়ক গড়ে উঠে। তবে সড়কটি এখনো যানবাহন চলাচল উপযোগী নয়। অন্যদিকে সেতুটির রেলিং ভেঙ্গে এখন নাজুক অবস্থা।
এই সেতুর কাছাকাছি দক্ষিন শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এই সেতু দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। রেলিং ভেঙ্গে পড়ার কারণে রয়েছে যে কোন মুহূর্তে সেতু থেকে পড়ে যাওয়ার ভয়।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি আলমগীর শেখ জানান, স্কুলের প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থী এ সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে। কোমলমতি এ সব শিক্ষার্থী সেতু পারাপার নিয়ে আতংকের মধ্যে থাকে।
কাঠাদিয়া-শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুর হোসেন বললেন সেতুটির বেহাল দশার কথা। ‘স্বচক্ষেই সেতুর এই করুণ চিত্র দেখছি। শিগগির সেতুটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাবো’- বললেন এই ইউপি চেয়ারম্যান।
উপজেলা প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসেন বললেন, ‘এই সেতুর বিষয় আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। তবে সেতুটি সরজমিনে পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

টঙ্গীবাড়ি উপজেলার উত্তর শিমুলিয়া গ্রামের সেতুটির অধিকাংশ রেলিং ভেঙ্গে পড়েছে
আবার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সিংহের নন্দন খালের উপর সেতু থাকলেও সেতুর দুই পাশে নেই সংযোগ সড়ক। তাই যানবাহন চলাচলের প্রশ্নই নেই! অথচ প্রায় ১৫ বছর ধরে সিংহের নন্দন খালের উপর সেতুটি বিরাজমান।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, উপজেলার আড়িয়ল ইউনিয়নের শানবাড়ি মোড়ে সিংহের নন্দন খালের উপর প্রায় দেড়-যুগ আগে এই সেতুটি নির্মিত হয়। এটি সিংহের নন্দন সেতু ছাড়াও শানবাড়ি সেতু হিসেবেও পরিচিত। আড়িয়ল স্বর্ণময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে এ সেতুর অবস্থান। সেতুর উপর দিয়ে বিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী প্রতিদিন পায়ে হেঁটে যাতায়াত করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন জানান, এক সময় এ খালের উপর কাঠেরপুল ছিল। আর ওই পুলের উপর দিয়েই সিংহের নন্দন, ফজুশাহ, গোয়ালপাড়া, ডুলিহাটা-প্রভৃতি গ্রামের জনসাধারণ যাতায়াত করত পায়ে হেঁটে। কাঠেরপুল ভেঙ্গে পাকা সেতু নির্মিত হলেও আজ অব্দি সেতুর দুই পাশে এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি।
সেতুটি নির্মাণের ফলে আড়িয়ল ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু সে সম্ভাবনা আর গতি পায়নি। এ সেতুটি তেমন কোন উপকারেই আসছে না। অথচ সেতুর দুই পাশে এপ্রোচ সড়ক হলে আড়িয়ল ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের সঙ্গে উপজেলা সদরের সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারত। গ্রাম গুলোর বাসিন্দাদের যাতায়াতের দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি দূর হতো।
এ প্রসঙ্গে টঙ্গীবাড়ি উপজেলা পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান জগলুল হালদার ভুতু জানান, সেতুটির দুই পাশে এপ্রোচ সড়ক নির্মাণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাইজিংবিডি
শেখ মোহাম্মদ রতন
Leave a Reply