আর বাকি হাতে গোনা কিছু সময়। এর পরই বসে যাবে পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান। এর মাধ্যমেই যুক্ত হবে পদ্মার এপার-ওপার। পদ্মার অবহেলিত দুই পার সময়ের হাত ধরে এখন আলো ঝলমলে জনপদ। এ খুশিতে আনন্দের ফোয়ারা বইছে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্ত মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ আশপাশের মানুষের মাঝে। সেতুটি চালু হলে দুই পারের প্রয়োজনীয়তা বাড়বে বহুগুণ। তৈরি হবে নতুন নতুন কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, পর্যটনকেন্দ্রসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এতে এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
পদ্মা সেতুর কারণে আধুনিকতার স্পর্শ পেতে শুরু করেছে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংবাসী। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন আধুনিক আবাসিক এলাকা। গড়ে উঠছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা। নান্দনিক ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েটির অর্ধেকেরও বেশি মুন্সীগঞ্জের ওপর দিয়ে গেছে। পদ্মা সেতুর কারণেই নতুন মহাসড়ক দিয়ে মাত্র আধাঘণ্টায় লৌহজং থেকে ঢাকায় চলে যাচ্ছে। বাড়িতে থেকে অনেকেই ঢাকায় গিয়ে অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে পদ্মা সেতুর গোড়ার লৌহজংয়ের মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজি আশরাফ খান বলেন, ‘দেশের এমন একটি বড় প্রকল্প হচ্ছে আমার ইউনিয়নের ওপর দিয়ে, যা পদ্মার এপার-ওপারকে সংযুক্ত করতে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর কারণে এরই মধ্যে আমার এলাকার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এলাকার অনেক লোকেরই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে পদ্মা সেতুর কারণে। আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে আমাদের এলাকায়।’
লৌহজং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওসমান গণি তালুকদার বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের জন্য আশীর্বাদ বয়ে নিয়ে এসেছে। বেড়েছে এলাকার জমির দাম। তৈরি হয়েছে দৃষ্টিনন্দন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঢাকা চলে আসছে আমাদের অনেক কাছে। নতুন নতুন কলকারখানাও তৈরি হতে যাচ্ছে।’
মুন্সীগঞ্জ-২ (লৌহজং-টঙ্গিবাড়ী) আসনের এমপি ও সাবেক হুইপ অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, পদ্মা সেতুর জন্য এ অঞ্চলের মানুষের অবদান মনে রাখার মতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে তারা তাদের বাপ-দাদাসহ নিজেদের বসতভিটা ছেড়ে দিয়েছে পদ্মা সেতুর জন্য।
সেতুর জাজিরা প্রান্তের তিন জেলায় দেশের প্রথম আট লেনের এক্সপ্রেস হাইওয়ে উদ্বোধন হয়েছে আরো আগেই। শিবচর অংশের এক্সপ্রেস হাইওয়ের পাশে গড়ে উঠেছে নতুন অন্তত আট থেকে ১০টি হাট-বাজার। এ পথেই রেললাইন বিস্তৃত হচ্ছে যশোর পর্যন্ত। শিবচরে দুটি, জাজিরায় একটি স্টেশনসহ জংশন হবে ভাঙ্গায়। অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে এক্সপ্রেস হাইওয়ে সংলগ্ন শিবচর, ভাঙ্গা ও সদরপুরে আড়িয়াল খাঁ তীরবর্তী এলাকায়। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ১০৮ একর জায়গায় এক হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী, ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর করেছেন এখানে।
শিবচরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। সরকারের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। সেতুর কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যে পদ্মাপারের এ জনপদের চেহারাই পাল্টে যাবে।
মো. মাসুদ খান, মুন্সীগঞ্জ ও প্রদ্যুৎ কুমার সরকার, শিবচর (মাদারীপুর)
কালের কন্ঠ
Leave a Reply