দক্ষিণ জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের একটি সেতুর স্বপ্ন পূরণে দুই বছর আগে যে বিপুল কর্মযজ্ঞের সূচনা হয়েছিল পদ্মার পাড়ে, তা পূর্ণ অবয়ব পেতে যাচ্ছে বৃহস্পতিবার।
সেতুর মাওয়া প্রান্তের ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর টু-এফ নম্বর স্প্যানটি বসাতে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় কাশ শুরু করেছেন প্রকৌশলীরা। হালকা কুয়াশার মধ্যে সেটা ঠিকঠাক বসানো হয়ে গেলেই পদ্মার দুই পাড় যুক্ত হয়ে যাবে।
আর তাহলেই ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এই সেতু দিয়ে রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগের পথ তৈরি হবে।
এরপর দ্বিতল এই সেতুর ঢালাইয়ের কাজ, অ্যাপ্রোচ রোড ও ভায়াডাক্ট প্রস্তুত করা, রেলের জন্য স্ল্যাব বসানো হয়ে গেলেই স্বপ্নের পদ্মাসেতু যানবাহন চলাচলের উপযোগী হবে।
আর এক বছরের মধ্যেই সেতুটি চালু করা যাবে বলে ইতোমধ্যে আশা প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এই মাহেন্দ্রক্ষণ ঘিরে পদ্মাপাড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। কেবল পদ্মার দুই তীরের বাসিন্দারা নন, ঢাকা থেকেও অনেকে এসেছেন সেতুর শেষ স্প্যানটি বসানোর কাজ নিজে চোখে দেখতে।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুর কাদের জানান, গত শুক্রবার পদ্মা সেতুর ৪০তম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে ছয় কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়। ৪১তম স্প্যানটি বসাতে বুধবারই সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়।
৩২০০ মেট্রিক টন ওজনের ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্প্যানটি মাওয়ার কুমারভোগের কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে নিয়ে ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির কাছে পৌঁছে যায় ভাসমান ক্রেইন ‘তিয়ান ই’। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ইঞ্চি মেপে শুরু হয় স্প্যান স্থাপনের কাজ।
যে ৪১টি স্প্যান দিয়ে পুরো পদ্মা সেতু তৈরি হচ্ছে, তার মধ্যে জাজিরা প্রান্তে ২০টি বসানো হয়েছে, আর মাওয়া প্রান্তে বসানো হয়েছে ১৯টি স্প্যান। একটি স্প্যান বসেছে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের মাঝখানে। এবার শেষ স্প্যানটি বসলেই দুই প্রান্ত জোড়া লেগে যাবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য (মুন্সীগঞ্জ-২) অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, “নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ করে বাঙালি বিশ্বর সামনে নিজেদের সক্ষমতার জানান দিল। এর মূলে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্ত।”
এই সেতু বাস্তাবায়নের জন্য যাদের ত্যাগ, শ্রম, ঘাম রয়েছে, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, “এই সেতুর সুফল ভোগ করবে পুরো জাতি।”
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় প্রথম স্প্যান। মোট ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু তৈরি হচ্ছে।
মূল সেতু নির্মাণের কাজটি করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি কোম্পানি সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।
বিডিনিউজ
Leave a Reply