শেখ মোহাম্মদ রতন: খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মুন্সীগঞ্জের গাছিরা। আর সংগ্রহ করা রস নিয়ে ভোর থেকে শহরের প্রধান সড়কের পাশে বসে থাকেন তারা। আর শহর থেকে অনেকেই সেখান থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন বিশুদ্ধ খেজুরের রস। চলতি শীত মৌসুমের শুরু থেকেই এটি মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার পরিচিত দৃশ্য।
জানা গেছে, গাছি সংকটের কারণে শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন দেখা গেছে খেজুরের রসের সংকট। তবে গ্রামের মানুষ শীতের সময়ে খেজুরের রসের দেখা পেলেও শহরের মানুষ বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। এছাড়া নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় অনেকে রস খাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এরপরও অনেক গাছি নিরাপদভাবে রস সংগ্রহ করে চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছেন।
চলতি বছর মুন্সীগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৪৪টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন গাছি আব্দুল কুদ্দুস। তার মতো অনেকে দৈনিক ১২০ লিটার বা তারও বেশি রস সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে গাছের মালিককে দেয়া হয় অর্ধেক। বাকি রস গাছের নিকট দাঁড়িয়েই ক্রেতাদের কাছে ১২০ টাকা লিটার বিক্রি করে দিচ্ছেন গাছিরা। এতে তারা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের রস পানের চাহিদাও পূরণ করছে। অনেকে আবার নানা স্বাদের খাবার তৈরির জন্যও এ রস সংগ্রহ করছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশার মধ্যেও রাত থেকে গাছির সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে রস কিনছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। গাছিরাও খেজুর রস স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে বাঁশের চাটাই এবং মোটা কাপড়ের পর্দা দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন। এতে রসের মধ্যে পোকা-মাকড় বা বাদুড় পড়া থেকে মুক্তি মিলছে। এসব গাছ থেকে একের পর এক রসের পাত্র নামাচ্ছেন গাছি। আর গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে গাছ মালিক। নামানোর পর সেখান থেকেই রস দুই ভাগ হয়ে যায়। এ রসের গুণগতমান ভালো থাকায় আর ব্যাপক চাহিদার কারণে এখন সহজে রস পাওয়া যায় না বলেও জানান একাধিক ক্রেতা।
শহর রস কিনতে যাওয়া নাজিম বলেন, ‘সদর উপজেলার রামপাল, কাটাখালী, বাংলাবাজার, শিলইসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বন্ধু বান্ধবরা ফোনের মাধ্যমে গাছির কাছে রস অর্ডার করেছি। সবার দুই কেজি করে রস লাগবে। তবে শর্ত একটাই, গাছ থেকে আমাদের উপস্থিতিতে নামাতে হবে। সে মোতাবেক নিজে এসে রস খেলাম, বাড়ির জন্যও নিয়ে যাচ্ছি। নিজেদের গাছ কাটার লোক নেই। জানতে পারলাম, এ এলাকায় গাছি রস বিক্রি করে।’ সেজন্য কিনতে আসা বলেও জানান তিনি।
আরেক ক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রস কেনার জন্য গাছির সঙ্গে রাত ৪টা থেকে ঘুরতে শুরু করি। যে এলাকায় যাই সেখানেই দেখি ক্রেতা বেশি রস কম। অবশেষে দুই ঘণ্টা ঘুরে ভোর ৬টার দিকে দক্ষিণ ইসলামপুর এলাকার একটি গাছ থেকে রস নামানোর পর কোনো ক্রেতা পেলাম না। শুধু গাছি আর সঙ্গে আসা আরও দুজন ক্রেতা। আমরা তিনজন পাঁচ লিটার রস কিনে নিতে সক্ষম হয়েছি।’
এ বিষয়ে গাছি আ. কুদ্দুস বলেন, এখন ৪৪টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। রাত ৩টার পর থেকে রস সংগ্রহ শুরু হয়। আগে রস নিয়ে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতাম, এটা ফেসবুকেও ভাইরাল হয়। এরপর মানুষ ফোনে রসের জন্য অর্ডার দেয়া শুরু করে। এখন গাছ রস নামানোর সঙ্গে সঙ্গে মালিক অর্ধেক, আর ক্রেতারা বাকি অর্ধেক কিনে নিয়ে যায়। মানুষের চাহিদার অর্ধেকও পূরণ করতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে রস চায় কিন্তু দিতে পারছি না, যা পাই গাছের নিচেই বিক্রি শেষ। তবে মানুষের যে পরিমাণ চাহিদা, এ জন্য আরও অনেক গাছ কাটার দরকার। ৪৯ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটি। তবে বয়স হয়েছে, তাই আগের মতো বেশি গাছ কাটতে পারছি না।’
শেয়ার বিজ
Leave a Reply