জাপানে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নাকচ

রাহমান মনি: জাপানে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নাকচ করে নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছেন টোকিওর একটি আদালত। বৃহস্পতিবার টোকিওর জেলা আদালত দ্বৈত নাগরিকত্বের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে রায় দেন। একইসঙ্গে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং ক্ষতিপূরণ দাবিতে করা একটি আবেদন খারিজ করে দেন আদালত।

২০১৮ সালে জাপানের বাইরে বসবাসরত ছয়জন বাদী হয়ে দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকার আদায়ে একটি মামলা দায়ের করেন। তারা সবাই জাপানের নাগরিকত্ব হারিয়েছেন। তাদের দাবি ছিল- সরকার তাদের জাপানি নাগরিকত্ব নিশ্চিত করুক।

ওই মামলার বিষয় ছিল জাপানি একটি আইন। যে আইনের শর্ত অনুযায়ী- একজন জাপানি নাগরিক যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন, তাহলে তিনি জাপানের নাগরিকত্ব হারাবেন।

আবেদনকারীরা ইতোমধ্যে সুইস পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন। তবে তারা দাবি করেছিলেন, কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনে তাদেরকে সুইস পাসপোর্ট গ্রহণ করতে হয়েছে। কিন্তু, আত্মীকভাবে তারা জাপানের সঙ্গে যুক্ত এবং তাদের শেকড় জাপানে। তাই, জাপানি পাসপোর্ট বহন করা তাদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে।

আদালত জাপানি নাগরিকত্ব ত্যাগ করার স্বাধীনতাকে সংবিধানে সুরক্ষিত রাখেন। কিন্তু, জাপানি নাগরিকত্ব বজায় রাখার অধিকারের বিষয়ে সংবিধানে কিছু উল্লেখ নেই।

নাগরিকত্ব আইন জাতীয়তা পরিবর্তনের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিলেও দ্বৈত নাগরিকত্ব নিবারণের চেষ্টা করে থাকে। তাই আইনের উদ্দেশ্য খুবই যুক্তিসঙ্গত বলে উল্লেখ করেন আদালত।

রায়ে বিচারক প্যানেল প্রধান মোরি হিদেকি সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বলেন, ‘কোনো জাপানি যদি অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন তাহলে তার জাপানি পাসপোর্ট বহনের অধিকার এমনিতেই বাতিল হয়ে যায়। একইসঙ্গে তা বহন করা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

এ ব্যাপারে জাপানের টেনিস তারকা ওসাকা নাওকি’র প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন আদালত।

নাওকি ওসাকা’র মা একজন জাপানি। কিন্তু, তার সন্তান জাপানে জন্ম নিলেও জন্মদাতা একজন বিদেশি নাগরিক (হাইতিয়ান) এবং আমেরিকাতে বেড়ে ওঠেন। ২২ বছর পর্যন্ত তিনি দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ পান। তবে, জাপানের আইন অনুযায়ী ২২ বছর পূর্ণ হওয়ায় তাকে একটি দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে বলা হয়। পরে, তিনি জাপানকে বেছে নেন।

একইভাবে কোনো বিদেশি যদি জাপানের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন, তাহলে তাকেও তার নিজের দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করার বিধান আছে জাপানের আইনে। আর নিজ দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেই জাপানি পাসপোর্ট নিতে হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের অক্টোবরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৫ লাখ ১৮ হাজার জাপানি নাগরিক অন্য দেশে স্থায়ী বসবাস করার (পার্মানেন্ট রেসিডেন্স) সুযোগ নিয়েছেন এবং তারা বিশ্বের নানান দেশে বসবাস করছেন। কিন্তু, তাদের মধ্যে ঠিক কতজন দ্বৈত নাগরিকত্বে আছেন সে হিসাব সরকারের কাছেও নেই।

rahmanmoni@gmail.com

THE DAILY STAR

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.