বিক্রমপুরের ঐতিহ্যবাহী ঘোল

‘দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো’- প্রবাদ মিথ্যে হতে বাধ্য মুন্সীগঞ্জ জেলার ভাগ্যকুল বাজারের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির দোকানের ঘোলের স্বাদের কাছে। মুন্সীগঞ্জের পূর্ব নাম ছিল বিক্রমপুর, বাংলার এক ঐতিহাসিক এলাকা। ুপ্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চল বৌদ্ধ জ্ঞানচর্চা এবং পরবর্তী সময়ে সাংস্কৃতিক প্রভাবের জন্য সুপরিচিত। ধারণা করা হয়, বিক্রমপুর নামের উৎপত্তি রাজা বিক্রমাদিত্যের নাম থেকে। তবে বর্তমানে বিক্রমপুর নামটির সঙ্গে যে নামটি একদম মিলে গেছে সেটি হলো ‘মিষ্টি’। ঢাকা কিংবা দেশের চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ‘বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ কিংবা ‘ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ নামে যে মিষ্টির দোকানগুলো দেখা যায়, তার উৎপত্তি মূলত মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকুল মান্দ্রা গ্রামের ভাগ্যকুল বাজারের মিষ্টির দোকান থেকেই। মিষ্টির পাশাপাশি এখানকার ঘোলও ভীষণ বিখ্যাত!

ভাগ্যকুল বাজারের ভেতরে পদ্মা নদীর পাড়ঘেঁষেই মিষ্টির দোকানগুলো। গোবিন্দ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, চিত্তরঞ্জন মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এবং আনন্দ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার বংশপরম্পরায় ঘোল ও নানা রকম মিষ্টি বানিয়ে আসছে। ঘোলের পাশাপাশি রসগোল্লা, দই, কালোজাম, চমচম, ছানা ইত্যাদি বেশ প্রসিদ্ধ। এখানকার ঘোলে মূলত দই, লেবু, লবণ, দুধ এবং কিছু বিশেষ উপাদান ব্যবহার করা হয়। লেবুর সুগন্ধে ভরপুর ঘোলের গ্লাস হাতে নিয়ে চুমুক দিতেই মস্তিস্ক যেন জগতের বাকি জটিলতা ভুলে যায় মুহূর্তের জন্য।

ঘোল হচ্ছে ছানার পানি, দুধ থেকে ছানা অপসারণের পর অবশিষ্টাংশই ঘোল নামে পরিচিত। এতে দুধের কেজিন প্রোটিন ছাড়া আর সব উপাদানই বিদ্যমান। এটি মূলত পনির উৎপাদনের একটি প্রধান উপজাত। দুধে খাদ্য উপযোগী অম্ল জাতীয় পদার্থ যেমন- লেবুর রস প্রভৃতি যোগ করলেই দুধের কেজিন প্রোটিন জমাট বেঁধে যায়। জমাট বাঁধা অংশটুকুই ছানা হিসেবে পনির তৈরির জন্য অপসারণ করা হয়। অবশিষ্ট তরল পদার্থই ঘোল। প্রাকৃতিকভাবে দুধ রেখে দিলে এতে ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া সংখ্যা বৃদ্ধি করে।

পনির উৎপাদনের একটি উপজাত হলেও ঘোলে দুধের কেজিন ছাড়া বাকী সব উপাদান বিদ্যমান বিধায় এর পুষ্টিগুণ অপরিসীম।

এটি শরীরের মেদ কমাতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন ঘোল (মাঠা) পানে শরীরের অতিরিক্ত মেদ হ্রাস পায়। এতে দুধের প্রোটিন থাকে না বলে যাদের দুধ পানে সমস্যা হয়, তারা ঘোল পানে দুধের অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান পেতে পারেন। ঘোলে দুধের শর্করা থাকে; ফলে এটি ভিনেগার উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহূত হয়

সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.