রিয়াদ হোসাইন: মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামকে সরাসরি সড়ক পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে দুটি বাঁশের সাঁকো। একটি সাঁকো রজতরেখা নদীর উপর অন্যটি সেরাজাবাদ খালের উপর রয়েছে।
শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের চলাচলের ভরসা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দুটি। সাঁকো দিয়ে চলতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের। বিভিন্ন সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। স্থানীয়দের অভিযোগ সাঁকো দুটি মুন্সিগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলা দুটির মধ্যবর্তী সীমানায় হওয়া জনপ্রতিনিধিরা দায়সাড়া ভাবে আছে। তাদের দাবি সড়ক যোগাযোগের জন্য সাঁকোর জায়গায় দ্রুত সেতু নির্মাণ করা হোক।
সরেজমিনে টঙ্গিবাড়ীর সেরাজাবাদ এলাকায় দেখা যায়, দিঘীরপাড়-সিপাহিপাড়া সড়কের ডান পাশেই একটি ছোট খাল। খালের উপর ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি আধাভাঙা বাশের সাঁকো। সাঁকোটি পার হলেই ৭’শ ফুট দৈর্ঘ্যে মাটির রাস্তাটি। রাস্তার শেষ প্রান্তে রজত রেখা নদী। নদীর পশ্চিম পাড় টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সেরাজাবাদ। নদীর পূর্বপাড় সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি। এ নদীর উপর প্রায় আড়াই’শ ফুট দৈর্ঘ্যের আরও একটি নরবড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো। সাঁকোটি নদী থেকে কমপক্ষে ২০ ফুট উঁচুতে। কোথাও এর উচ্চতার পরিমাণ কম-বেশিও আছে। সাঁকোটি উঁচু হওয়ায় এক সাথে ৪-৫ জন উঠলেই দুলতে শুরু করে। সাঁকো দুটির উপর দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা যাতায়াত করছেন।
ঢালিকান্দি এলাকার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিদিন এ পথ দিয়ে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। সকাল ও সন্ধ্যায় সাঁকো পাড় হতে লাইনে দারাতে হয়।
তিনি আরও বলেন, রজতরেখা নদীর উপর একটি ও সেরাজাবাদ খালের উপর একটি ছোট সেতু নির্মাণ করা হলে সহজেই মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের কংশপুরা, ঢালিকান্দি, নোয়াদ্দা, শ্যামারচর, রাজারচর, আধারা, আমঘাটা, মুন্সিকান্দি, বেহেরপাড়াসহ ১০ গ্রামের মানুষ সহজেই মুন্সিগঞ্জ শহরসহ জেলার অন্যান্য উপজেলায় সড়ক পথেই যেতে পারবে।
স্থানীয়রা জানান, ১০ বছর আগে রজতরেখা নদীর পূর্ব পাড় থেকে নৌকায় করে সিপাহীপাড়া-দিঘীরপাড় সড়কে পর্যন্ত যাতায়াত করতে হতো। সেখান থেকেই জেলার সব যায়গায় যাওয়া-আসা হতো তাদের। ২০১০ সালে এলাকাবাসীর নিজেদের অর্থায়নে প্রথমে খালের উপর ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকো তৈরি করে। সেখান থেকে ৭’শ ফুট মাটির রাস্তা। নদীর উপর আরও একটি বাঁশের সাঁকো স্থানীয়রা তৈরি করেন। প্রতিবছর ব্যক্তি উদ্যোগে সাঁকোর সংস্কার করা হয়। জীবনযাত্রার মান-উন্নয়নের জন্য এখানে একটি কংক্রিটের সেতু খুব প্রয়োজন। তারা আক্ষেপের সাথে বলেন, মুন্সিগঞ্জ ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সীমানা ঘেঁষা হওয়ায় জন প্রতিনিধিরা নিজেদেন দায় এড়িয়ে যায়। অথচ জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা ভোট চাইতে আসেন। নদীর উপর সেতু নির্মাণের নানা প্রতিশ্রুতিও দেন। তবে নির্বাচনের পর আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়না। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এলাকার মানুষের খোঁজ-খবর নেয়না। বছরের পর বছর যায়। সেতু হয়না।
এ দিকে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের ৩৫টি মসজিদ, ৭টি মাদরাসা, ২টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নদীর দুই পাড়ের হাজার মানুষের সাঁকোতে পারাপার হচ্ছে। প্রায় সময় ছোট শিক্ষার্থী, নারী ও বয়স্করা সাঁকো থেকে পড়ে যাচ্ছে।
সেরাজাবাদ রানা শফিউল্লাহ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাবিয়া আক্তার। সে ঢালীকান্দি এলাকার বাসিন্দা। প্রতিদিন এ পথেই কলেজে আসা-যাওয়া তার। রাবিয়া জানায়, রজত রেখা নদীর উপরের বাঁশের সাঁকোটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বর্ষার তুলনায় শুকনো মৌসুমে এর উচ্চতা দ্বিগুণ হয়। ফলে এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াতের সময় অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটে। সে নিজেও এই সাঁকো থেকে পরে গিয়ে বেশ কয়েকবার আহত হয়েছেন। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার ছোট শিক্ষার্থীদের কথা আমলে নিয়ে দ্রুত বাঁশের সাঁকোর যায়গায় একটি কংক্রিটের সেতু নির্মাণের দাবি তার।
নোয়াদ্দা এলাকার বাসিন্দা কাজি আবদুল মতিন (৭৫) বলেন, দেশ স্বাধীনের আগে নৌকায় করেই এই নদীটি পারাপার হতেন। এক দশক আগে স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। শুনেছি দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তাহলে এখনও সদর উপজেলায় বাঁশের সাঁকো কেনো? এখানকার জনপ্রতিনিধিরা সেতুটি নির্মাণ করে দিতে পারলোনা। সেতু দুইটি হলে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে স্কুল-কলেজ ,মাদ্রাসায় যেতে পারবে।
মোল্লাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মহসিনা আক্তার বলেন, ‘রজত রেখা নদীতে প্রায় ৩০০ ফুট দীর্ঘ একটি সেতু প্রয়োজন। এছাড়াও খালে একটি কালভার্ট। সেতুর অভাবে এলাকার মানুষ কি পরিমাণ ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হয় তা জানা আছে। সেতু নির্মাণের জন্য চেয়ারম্যান হওয়ার আগে আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। উপজেলা এবং সংসদ নির্বাচনের আগে সব প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রকৌশলীরা সরেজমিনে এসে ছিলেন। দেখে গেছেন, তবে কাজ হয়নি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবো।’
দৈনিক অধিকার
Leave a Reply