রিয়াদ হোসাইন: বাড়তি লাভের আশায় কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে বিকল্প চাষের দিকে ঝুঁকছেন মুন্সিগঞ্জের কৃষকরা। তাই আলু বা মরিচের মতো প্রথাগত চাষ ছেড়ে সূর্যমুখি বুনেছিলেন তারা। সূর্যমুখির ছটায় বিস্তীর্ণ জমি এখন হলুদ।
কিন্তু তাতেও রাতে ঘুম নেই কৃষকদের চোখে। বিকল্প চাষ করে মহা বিপদে পড়েছেন তাঁরা। সফল ভাবে ফসল ফলালেও সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি না জানায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে। এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেও সাড়া না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন চাষিরা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর।
বুধবার (১৭ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার হাসাইল এলাকার কৃষক লিটন দেওয়ান ৬০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখি চাষ করেছেন। তার জমিতে পাকা ও আঁধাপাকা সূর্যমুখি ফুল বাতাসে দোল খাচ্ছে। জমির পাশেই তরুণ-তরুণীসহ নানান বয়সের মানুষ ছবি তুলছেন সূর্যমুখি ফুলের সঙ্গে। এতে বিরক্ত হচ্ছেন লিটন দেওয়ান। কেননা সংরক্ষণ পদ্ধতি না জানায় জমিতে পাকা ফুল ঝরে পড়ছে অন্যদিকে দর্শনার্থীর ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এ কৃষকের।
এসময় কৃষক লিটন দেওয়ান বলেন, কৃষি অধিদপ্তর থেকে বিনামূল্যে বীজ পেয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখি বীজ বুনেছি। গত ৪ মাসে বিভিন্ন প্রকার সার ও পানির সেঁচ দিয়ে আমার ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এখন সূর্যমুখি ফুল কিভাবে সংরক্ষণ করে তেল উৎপাদন করবো এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
কৃষি অধিদপ্তরে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তারা আজ আসবে, কাল আসবে বলে আমাকে ঘুরাচ্ছে। এদিকে ফুলও ঝরে পড়তে শুরু করেছে। সাথে সূর্যমুখি ফুল দেখতে আসা মানুষজন ছবি তুলতে গিয়ে গাছ ও ফুলের ক্ষয়ক্ষতি করছেন।
কৃষক ইদ্রিস মুন্সি জানান, কৃষি অধিদপ্তর থেকে সূর্যমুখি বীজ দেওয়ার পর আমরা তা রোপণ করি। পরে কৃষি অধিদপ্তর আমাদের আর কোনও খোঁজখবর নেয়নি। সূর্যমুখি ফুল কিভাবে উত্তোলন করবো কিভাবে তেল সংগ্রহ করবো এ বিষয়ে কোনও ধরনের দিকনির্দেশনা বা প্রশিক্ষণ দেয়নি। এখন সূর্যমুখি ফুল পেকে ঝরে পড়ছে। সঠিকসময় উত্তোলন করতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
সদর উপজেলার কৃষক রতন মোল্লা বলেন, লাভের আশায় প্রথমবার সূর্যমুখি চাষ করেছি এবং ভালো ফসলও হয়েছে। এখন সূর্যমুখি ফুল পাকতে শুরু করেছে। এসময় কৃষি অধিদপ্তর যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলেই লাভের মুখ দেখতে পারবো। শুনেছি সূর্যমুখি তেলের অনেক দাম। তাই এই ফসল নষ্ট হতে দিতে চাই না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছরই প্রথম জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ৩১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখি চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৩ হেক্টর, টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় ১০ হেক্টর, সিরাজদিখান উপজেলায় ৬ হেক্টর, লৌহজং উপজেলায় ৭ হেক্টর ও গজারিয়া উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখি চাষ করা হয়। কৃষি পুনর্বাসন প্রণোদনার আওতায় জেলায় ৮শ’ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ১ কেজি করে আরডিএস জাতের সূর্যমুখির বীজ বিতরণ করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, কনসেলার যন্ত্র বা হাত দিয়ে সরাসারি বীজ সংগ্রহ করা যায়। পরে বীজ ভালো মতো শুকিয়ে তা ঘানির মাধ্যমে তেল উৎপাদন করতে পারবে। এ বিষয়ে কৃষকদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি এখন বাংলাদেশে নতুন ফসল তাই স্বাভাবিক কিছুটা সমস্যা হতে পারে কৃষকদের। তবে সমস্যা সমাধানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সবসময় তৎপর রয়েছে।
দৈনিক অধিকার
Leave a Reply