রাহমান মনি: টোকিও শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর ফলক পুনঃস্থাপনে স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২২ পালন করেছে জাপান প্রবাসীরা।
১২ জুলাই ২০০৫ টোকিও তোশিমা সিটি মেয়র তাকানোর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক টোকিও শহীদ মিনার এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন এবং ২০০৬ জুলাই তৎকালীন জাপানের পরিবেশ মন্ত্রী এবং বর্তমান টোকিও গভর্নর কোইকে ইয়ুরিকো এবং বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী মেজর ( অবসর প্রাপ্ত ) কামরুল ইসলাম কর্তৃক উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে টোকিও শহীদ মিনার হয়ে যায় জাপান প্রবাসীদের গর্ব করার অন্যতম একটি বিষয়। দল মত , ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সদিচ্ছা ও স্থানীয় প্রশাসন তোশিমা সিটি ও জনগনের আন্তরিক সহযোগিতা ও উদারতায় যে বাঙালী জাতীর অহংকার শহীদ মিনারটি জাপানের মাটিতে স্থাপিত হয়েছিল একথা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। শহীদ মিনারটি বাংলাদেশের বাহিরে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেয়। সেই থেকে জাপান প্রবাসীরা গর্বের সাথে সম্মিলিতভাবে ২১ শে’র প্রভাতফেরী করে আসছে।
শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ভিত্তিপ্রস্তর ফলকটিতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকারী হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নাম এবং শহীদ মিনার কি এবং কেন, তার বিবরণ তিনটি ভাষায় (বাংলা,ইংরেজী এবং জাপানীজ ) ভাষায় উল্লেখ ছিল যা পড়ে পর্যটকরা সহজে আমাদের দেশে ভাষা আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে এবং এই মিনার সম্পর্কে সহজে জানার সুযোগ পেতো।
সম্প্রতি পার্কের উন্নয়ন কাজের সুবিধার জন্য শহীদ মিনারটি অনতিদূরে সরিয়ে নেয়া হয়। পরবর্তীতে কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর আবার পুনঃস্থাপন করা হয় । কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত , শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে ফলকটি আর শোভা পাচ্ছে না। এ নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে এক ধরণের ক্ষোভের সঞ্চয় হয়। খালেদা জিয়ার নাম থাকায় দূতাবাসের নির্দেশে ফলকটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে বলে প্রবাসীরা মনে করে এবং নির্মাণ কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারে ।
করোনা মহামারির কারনে এবছর তোশিমা সিটি কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার্থে সম্মিলিত প্রভাতফেরী বন্ধ রাখে। তবে যেহেতু এটি একটি উদ্যোন তাই জনসাধারণের প্রবেশে বাধা নেই। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্য বিধি মেনে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এক ঘোষণায় বলা হয়।
তাই এবছর বিক্ষিপ্তভাবে শহীদ মিনার এ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ ঘটে প্রবাসীদের । বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আঞ্চলিক সংগঠন সমূহের পক্ষ থেকে শহীদ মিনার বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। রাত ১২টা ১ মিনিটের সময়ও কিছু সংখ্যক প্রবাসী তীব্র শীত উপেক্ষা করে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া দিনব্যাপী ব্যক্তিগত ভাবেও অনেকে শ্রদ্ধা জানান।
পূর্ব অনুমতি নিয়ে জাপান শাখা বিএনপি প্রবাসীদের পক্ষ থেকে টোকিও শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর ফলক পুনঃস্থাপনে তোশিমা মেয়র বরাবর এক স্মারক লিপি প্রদান করে ।তিনটি ভাষায় ( বাংলা , ইংরেজী এবং জাপানিজ)লিখিত তোশিমা সিটি মেয়রের পক্ষে সংস্কৃতি ও পর্যটন বিভাগের প্রধান হানেদা তিনটি ভাষায় ( বাংলা , ইংরেজী এবং জাপানিজ)লিখিত স্মারক লিপি গ্রহন করেন। এসময় সর্বস্তরের প্রবাসী এবং তোশিমা সিটি অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন ।
rahmanmoni@gmail.com
Leave a Reply