পদ্মার ভাঙনের পাশে চলছে বালু উত্তোলন, প্রশাসন পাচ্ছে না কাউকে

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় পদ্মার শাখা নদী থেকে খননযন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের ফলে উপজেলার পদ্মাতীরবর্তী সরিষাবন ও ছাতক এলাকয় দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এতে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি। প্রশাসনকে বারবার জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় মিজান খাঁ নামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি বেপরোয়াভাবে নদী ও নদীরবর্তী জমি কেটে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টি বাল্কহেডের মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব বালু বিক্রি করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, মিজান খাঁ অনেক প্রভাবশালী। বেশ কয়েক বছর ধরে পদ্মার শাখা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলছেন তিনি। অবৈধভাবে উত্তোলতি বালু দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। বালু তোলার কারণে প্রতিবছর আমাদের বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে।

তারা জানান, মধ্যখানে কয়েক মাস বন্ধ ছিল। এক সপ্তাহ ধরে আবারো দিনরাত বালু উত্তোলন চলছে। এতে আবারো ভাঙন দেখা দিয়েছে। দিনের বেলায় নদী থেকে বালু তোলে। সন্ধ্যার পর ফসলি জমিকাটা শুরু করে। তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। প্রশাসনকে বারবার জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

সরেজমিনে শনিবার (১৮ জুন) দেখা যায়, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পদ্মা নদীর ছাতক ও সরিষাবন এলাকায় পদ্মা নদী ভেঙে নদীতে বিলীন হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভাঙনে অনেকে বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অনেকেই দিন কাটাচ্ছে ভাঙন-আতঙ্কে। গ্রাম দুটির পাশে নদী থেকে খননযন্ত্র বসিয়ে জম জম নামের যন্ত্রটি বালু উত্তোলন করে বড় একটি বাল্কহেড বোঝাই করা হচ্ছে। তার পাশেই বালু বোঝাইয়ের অপেক্ষায় অন্তত আরও ২০টি বাল্কহেড। একেকটি বাল্কহেডে ১০ থেকে ১২ হাজার ফুট বালু বহন করা হয়।

এ সময় ওই খননযন্ত্রের দায়িত্বে থাকা সোহেল সৈয়াল নামে এক তরুণ বলেন, দিঘিরপাড় গ্রামের মিজান খাঁ তার বোনজামাই। খননযন্ত্রটি মিজানের। গত শুক্রবার থেকে তারা এ নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন। উত্তোলিত বালু বাল্কহেডের মাধ্যমে বিক্রি করছেন তারা।

ছাতক এলাকার মো. শাহিন বলেন, এর আগে সাতবার আমাদের বাড়ি নদীতে ভেঙেছে। এবার আবার আমার এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা কারও কাছে বলে কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। আমার গ্রামের কাদির বেপারী, বাদশা দেওয়ান, মজিবুর দেওয়ান, মোহন খান, মোবারক মুন্সী, মোস্তাফা মিজি, ইব্রাহিমসহ ৮০টি পরিবারের ঘরবাড়ি এখন ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাতক এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, বালুখেকোদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তাকে মেরে পদ্মায় ফেলে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এর আগে আমরা সরিষাবন ছিলাম। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে আমাদের ৩০ থেকে ৪০টি পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। আমরা আহাজারি করেও বালু উত্তোলন থামাতে পারিনি।

প্রশাসনকে জানিয়েছেন, কিন্তু প্রতিকার পান না জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসনের লোকজন মিজানকে চেনে, কিন্তু কোনো অ্যাকশন নেয় না। আমরা মৌখিক বলার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনও হয়েছে প্রশাসনের লোকজন অভিযানে আসার আগেই তাদের কাছে খবর চলে এসেছে। এবার আবার ছাতক এলাকায় কাটা শুরু করেছে। কয়েক দিনের মধ্যে এ গ্রামটিও বিলীন হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার (১৮ জুন) সকাল পর্যন্ত একটি খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুললেও সেদিন বিকেল থেকে রোববার (১৯ জুন) সারা দিন দুটি যন্ত্র দিয়ে একটানা বালু উত্তোলন চলেছে।

এ বিষয়ে মিজান খাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বালু উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ওই খননযন্ত্র আমার না। ওই ব্যবসা অন্য কারও। এ সময় তার শ্যালক এই প্রতিবেদকের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন জানালে মিজান আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা তানজিম অন্তরা বলেন, বালু উত্তলনের বিষয়টি জানতে পেরে আমরা নদীতে গিয়েছিলাম। তখন কাউকে পাওয়া যায়নি। আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব.ম শামীম/ঢাকা পোষ্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.