৭৭তম হিরোশিমা দিবস পালিত

রাহমান মনি: শনিবার(৬ আগস্ট)ভয়াল বিভীষিকার হিরোশিমা দিবস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্রান্তিলগ্নে ১৯৪৫ সালের এই দিনে জাপানের হিরোশিমা শহরে বিশ্ব ইতিহাসের প্রথম পারমাণবিক বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। আজ তার ৭৭তম বর্ষপূর্তি যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে দিবসটি পালিত হয়েছে জাপানে।

দিবসটি পালন উপলক্ষে জাপান সরকার আজ শনিবার সকালেই হিরোশিমায় পিস মেমোরিয়াল পার্কের স্মৃতিসৌধে এক শ্রদ্ধা-স্মরণ সভার আয়োজন করে।

প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে বিশ্বের ৯৯টি দেশের অতিথিরা অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস। দীর্ঘ ১২ বছরের মাথায় কোনো জাতিসংঘ মহাসচিব হিরোশিমা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন।

এবার ৩ হাজার জাপানি নাগরিককে সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে আগের দুই বছর সীমিত আকারে দিবসটি পালিত হয়।

সকালের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সকাল ৯টায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন । ১৫ মিনিট দুই নেতা কথা বলেন।

এসময় কিশিদা হিরোশিমায় পিস মেমোরিয়াল অনুষ্ঠানে আন্তনিও গুতেরেসের উপস্থিতিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বাস্তবতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকাই পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের দিকে সব ধরনের প্রচেষ্টার সূচনা বিন্দু। একমাত্র দেশ হিসেবে যুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার জাপান পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন বিশ্বের নেতৃত্ব দিবে।

এই ধরনের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে আন্তনিও গুতেরেস বলেন, জাপানের মতো নৈতিক কর্তৃত্বের সাথে অন্য কোন দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে কর্তৃত্ব করার নৈতিকতা রাখেনা ।

আন্তনিও গুতেরেস হিরোশিমা সফর এবং হিরোশিমা শান্তি স্মারক অনুষ্ঠানে উপস্থিতি তিনি যেমনটি চেয়েছিলেন তেমনিভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানান ।

বৈঠকে কিশিদা চীনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র উৎক্ষেপণকে জাপান এবং জাপানি জনগণের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর বিষয় উল্লেখ করে চীনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে মারাত্মক প্রভাবিত করবে বলে উল্লেখ করেন ।

দুই নেতা বিশ্ব শান্তিতে একসাথে ঘনিস্টভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন ।

উল্লেখ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯৪৯ সালে হিরোশিমাকে ঘোষণা করা হয় শান্তির শহর। নির্মিত হয় শান্তি স্মৃতি পার্ক। প্রতিবছরই শোক আর বেদনায় দিনটিকে স্মরণ করে বিশ্ব। সঙ্গে চলে যুদ্ধ বিরোধী প্রচার।

স্বজন হারানোর বেদনায় এখনও কিংকর্তব্যবিমূঢ় জাপানবাসী। এখনও দুই শহরে বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় জন্ম নেয় বিকলাঙ্গ শিশু, ক্যান্সারসহ নানা দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় মানুষ। প্রায় আট দশকেও ভয়াল সেই দিনের কথা ভোলেনি জাপান।

পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম এই হামলার ৭৭তম বার্ষিকী পালন করছে বিশ্বের যুদ্ধবিরোধী মানুষ।

rahmanmoni@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.