নামেই ২৫০ শয্যার হাসপাতাল

হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০–এর বেশি রোগী সেবা নিতে আসে। তবে নানা সংকটে কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না।
মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার। অথচ হাসপাতালটি চলছে ১০০ শয্যার কম জনবল দিয়ে। জেলা হাসপাতাল হলেও এখানে নেই চক্ষু, সার্জারি বিশেষজ্ঞ। গাইনি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন মাত্র একজন করে। নেই চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত ওষুধ। এ হাসপাতালে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী এলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না।

গত বুধবার সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালে ঢুকতেই দেখা যায়, রোগীদের ভিড়। রোগীদের চাপে পা ফেলার জায়গাটিও ছিল না কোথাও। হাসপাতালে দুটি টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে একতলা ও দোতলার প্রতিটি চিকিৎসকের কক্ষে, ফার্মেসি, প্যাথলজি, রেডিওলজিসহ সব জায়গায় রোগী ও তাঁদের স্বজনদের ভিড়। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হয়ে অনেকে মেঝেতে বসেছিলেন।

হাসপাতালের ফার্মেসির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ফজল হক। তিনি বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। টাকাপয়সা নেই। দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তার তিনটি ওষুধ লিখে দিয়েছে। ভেবেছিলাম হাসপাতাল থেকে পাব। সে জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। পরে শুনতে পেলাম, এই ওষুধগুলো আমাকে বাইরে থেকে কিনতে হবে। তাহলে সরকারি হাসপাতালে এসে কী লাভ।’

মুন্সিগঞ্জ নাগরিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক সুজন হায়দার বলেন, চিকিৎসাসেবা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাব এবং তাঁদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে এ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত মুন্সিগঞ্জ জেলার মানুষ। সামান্য জ্বর, সর্দি হলেও চিকিৎসা নিতে আসা মানুষকে ঢাকায় পাঠানো হয়। তাহলে কাগজে-কলমে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল করে লাভ কী!

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটি শুরুতে ছিল ৫০ শয্যার, চলত এততলা ভবনে। ২০০৬ সালে হাসপাতালটিকে দোতলা ভবনে স্থানান্তর করে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। চলতি বছর হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এ হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম চালানোর জন্য ৫৯ জন চিকিৎসক দরকার, বর্তমানে আছেন মাত্র ৩৯ জন। এর মধ্যে পাঁচজনকে আবার জেলার অন্যান্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে আনা হয়েছে।

হাসপাতালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী ৮৩ জনের মধ্যে রয়েছেন মাত্র ৫৬ জন। জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স ৯৪ জনের প্রয়োজন হলেও আছেন ৫৯ জন। নেই চক্ষু, সার্জারি বিশেষজ্ঞ। নাক, কান, গলা, গাইনি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ দুজন করে থাকার কথা থাকলেও আছেন একজন করে। হাসপাতালের রেজিস্টার বহি দেখে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০–এর ওপরে রোগীর সেবা নিতে আসে। বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

মুন্সিগঞ্জ সিভিল সার্জন মঞ্জুরুল আলমের দাবি, মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার মান অনেক ভালো। গড়ে প্রতিদিন হাসপাতালে ১১৩ জন রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেয়। ইনডোর-আউটডোরে পর্যাপ্ত ওষুধ দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। ২৫০ শয্যার জনবল নিয়োগ হচ্ছে। চক্ষুসহ যেসব বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই, জনবল নিয়োগ হলে সেসব বিভাগ চালু হয়ে যাবে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিশুর চিকিৎসকের কক্ষের সামনে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের দীর্ঘ সারি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও লম্বা হচ্ছিল এ সারি। এ সময় কথা হয় মামুন মীর নামের একজনের সঙ্গে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করেন তিনি। চিকিৎসকের কক্ষের সামনে এসে জানতে পারেন, চিকিৎসক নেই। মামুন আক্ষেপ করে বলেন, ‘এ জন্যই বাচ্চাকে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাই। টাকা খরচ হয়, তবে সেবাটা পাওয়া যায়। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার অবস্থা কতটা খারাপ, সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।’

প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.