পুলিশের সঙ্গে গত মাসে সংঘর্ষে বিএনপি নেতাকর্মীরা আহত, এমনকি একজন নিহত হলেও তাঁদেরই পাকড়াও করা হচ্ছে। ফলে গ্রেপ্তার আতঙ্কে থমকে গেছে মুন্সীগঞ্জ বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম। মামলার এজাহারে নাম নেই এমন নেতাকর্মীকেও আটক করে পুলিশের দায়ের করা মামলায় আসামি দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হচ্ছে বলে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও পুলিশ হয়রানি করছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে গেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতারা জানান, মামলার এজাহারনামীয় আসামি না হলেও গত ১৩ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জ শহরের বাজার এলাকা থেকে জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সুলতান আহমেদকে আটক করে পুলিশ। এরপর পুলিশের ওপর হামলার আসামি দেখিয়ে তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনার পর গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর জেলা শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। এ সময় পুলিশ দলীয় ব্যানার কেড়ে নিয়ে লাঠিচার্জ শুরু করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে যুবদল নেতা শাওনসহ ৫০ জন আহত হন। গুরুতর আহত যুবদল নেতা শহীদুল ইসলাম শাওন পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এ ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা, অস্ত্র লুটের চেষ্টা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে সদর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। এ মামলায় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতনকে প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া দলের ৩১৩ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ, ৬টি উপজেলা ও ২টি পৌর বিএনপির আহ্বায়ক-সদস্য সচিবসহ স্থানীয় বিএনপি, জেলা যুবদল, জেলা ছাত্রদলের শীর্ষ পদপদবির প্রায় সব নেতাকে আসামি করা হয়।
অপর মামলাটি করেন মুক্তারপুরের বাগবাড়ী এলাকার বাসিন্দা শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুল মালেক। শ্রমিক লীগের অফিস ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, মারধর করে জখম করার অভিযোগে দায়ের করা এ মামলায় সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহম্মেদকে প্রধান আসামি করা হয়। এ মামলায় ৫২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়। এ দুটি মামলায় ১ হাজার ৩৬৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মাহাবুবুল আলম স্বপন বলেন, মামলার পর উচ্চ আদালত থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা জামিন পান। এর পর মুন্সীগঞ্জের আদালতে পর্যায়ক্রমে বিএনপির নেতাকর্মীরা আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। এর মধ্যে গত ৯ নভেম্বর কামরুজ্জামান রতনসহ ১৭ নেতাকর্মী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চান। বিচারক রতনসহ ৯ জনের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এর পর থেকে তাঁরা জেলহাজতে রয়েছেন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আজাদ বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় তাঁদের মহাসমাবেশ ঠেকাতে ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ। রতনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি পুলিশের সঙ্গে মারামারি করেননি।
তবে সদর থানার ওসি মো. তারিকুজ্জামান দাবি করেন, মামলার আসামি ও পুলিশের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়- এমন কাউকে গ্রেপ্তার করার অভিযোগ সঠিক নয়।
সমকাল
Leave a Reply