ছয় বছরের শিশুপুত্র জিহাদকে বুকে নিয়ে বসতঘরে খাটের ওপর শোয়া রুবিনা আক্তার। লেপে ঢেকে আছে মা-ছেলের অর্ধেক শরীর। নিথর নিস্তব্ধ দেহ দু’টির ওপর উড়ছে মাছি। তালাবদ্ধ ওই ঘর থেকে আসছিল পঁচা গন্ধ। একটু দূরেই পড়ে আছে বিরিয়ানির একটি প্যাকেট। মা-ছেলের মরদেহ ঘরে থাকলেও স্বজনরা জানেন না সে খবর। গত চারদিন ধরে খুঁজে ফিরছিলেন তারা।
শনিবার বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার মাওনা চৌরাস্তা দায়পাড়া এলাকায় নিজের বসতঘরেই মিলল রুবিনা আক্তার ও তার ছেলে জিহাদের লাশ।
প্রতিবেশীরা জানান, মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে ঝুমন হোসেন মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় এসে জমি কিনে বাড়ি করেন। এর আগেই দায়পাড়া এলাকার সিরাজুল ইসলামের কন্যা রুবিনাকে বিয়ে করে সংসার পাতেন তিনি। একটি ওয়ার্কশপে কাজ করে ঝুমন সংসার চালান। জিহাদ নামে ৬ বছরের ওই পুত্র সন্তান ছিল তাদের। গত বুধবার হঠাৎ করেই রুবিনা ও তার ছেলে জিহাদ নিখোঁজ হয়ে যায়। তাদের বাড়ির প্রধান ফটক তালাবদ্ধ। বসত ঘরের বাইরে থেকে তালা দেওয়া। এ কারণে স্বজনদের কেউ আর বাড়িতে খোঁজ নেয়নি।
নিহতের বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাড়ির মূল ফটকে তালা ছিল, ফোনেও মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছিল না। কোথাও না পেয়ে আমার বড় মেয়ে সেলিনা আক্তারকে বাড়ির মূল ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে যেতে বলি। এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে কয়েকজন মিলে বাড়ির মূল ফটকের তালা ভেঙে দেখতে পান ঘরের দরজাতেও তালা আটকানো। এরপর ঘরের তালা ভেঙে দেখতে পায় মা-ছেলের লাশ।
নিহত রুবিনার বোন সেলিনা বলেন, অনেক দিন আগে থেকেই আমার বোনের সঙ্গে তার স্বামীর পারিবারিক কলহ ছিল। এ কারণে তার স্বামী ঝুমন মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসত। ক’দিন আগেও বোনের সঙ্গে তার স্বামীর ঝগড়া হয়েছে।
শ্রীপুর থানার ওসি (তদন্ত) আনিসুর আশেকীন বলেন, লাশের পাশে একটি বিরানির প্যাকেট ছিল। এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। লাশ দু’টি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সমকাল
Leave a Reply