মুন্সীগঞ্জে অজ্ঞান পার্টি আতঙ্কে অটোরিকশা-মিশুকচালকরা

মামুনুর রশীদ খোকা: দেখতে নিরেট ভদ্রলোকই মনে হবে। পরণে কোর্ট-টাই, চকচকে প্যান্ট আর দামি জুতা। বোঝার উপায় নেই এ ভদ্রলোকই চালককে অজ্ঞান করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কিংবা মিশুক নিয়ে চম্পট দিতে বেশ পারদর্শী। সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জ শহরে এমন অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এদের প্রধান টার্গেট ব্যাটারিচালিত মিশুক ও অটোরিকশা। একই সঙ্গে পথচারীকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

জানা যায়, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা যাত্রীবেশে অটোরিকশা কিংবা মিশুকে চড়ে প্রথমে চালকের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। কফি খাওয়ান। এরপর চালক অচেতন হয়ে পড়লে অটোরিকশা বা মিশুক নিয়ে চম্পট দেন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে গেল এক সপ্তাহে চালককে অচেতন করে মিশুক ও অটোরিকশা নিয়ে চম্পট দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৬-৭টি।

গেল ১৪ জানুয়ারি দুপুরে জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার নেত্রাবতি গ্রামের হানিফ শেখকে (২৫) অচেতন করে তার ব্যাটারিচালিত মিশুক নিয়ে চম্পট দেয় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। চালক হানিফ শেখ জানান, বালিগাঁও থেকে তার মিশুকে চড়েন কোট-টাই পরিহিত তিন যাত্রী। প্রথমে যাত্রীদের গন্তব্য ছিল মুক্তারপর পেট্রোলপাম্প। এরই মধ্যে কথাবার্তায় তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন যাত্রীরা। পরে তারা শহরের পুরাতন কাচারী এলাকার ডিসি পার্কের সামনে পৌঁছেন। সেখানে যাত্রীদের দেওয়া কফি পান করেন। এরপরই অচেতন হয়ে পড়লে তার মিশুক নিয়ে যায় যাত্রীবেশী অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা।

একই স্থান থেকে গত ১৬ জানুয়ারি দুপুরে নিজের ব্যাটারিচালিত মিশুক খুইয়েছেন সদরের পঞ্চসার ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামের ইকবাল হোসেন রচি (৪২)। তিনি জানান, দুপুর ১২টার দিকে সদর থানার সামনে থেকে তিন ভদ্রলোক তার মিশুকে চড়েন। ডিসি পার্কের সামনে গেলে যাত্রীরা তাকে কফি খেতে দেন। ওই কফি পান করার কিছুক্ষণ পরই তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর পথচারীরা তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে।

ঋণ নিয়ে দেড় লাখ টাকায় ব্যাটারিচালিত মিশুক কেনেন মো. রবিন আহমেদ (২৩)। মাসে ১০ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয় তাকে। গত সপ্তাহের শুরুর দিকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সামনে থেকে তার মিশুকটি একইভাবে খুইয়েছেন অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে। এভাবে একের পর এক ব্যাটারিচালিত মিশুক খোয়ানোর ঘটনা ঘটে চলেছে জেলা শহরে।

অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের হাত থেকে বাঁচতে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অর্থ) সুমন দেব বলেন, ‘শহরে নতুন করে এ অপরাধ হচ্ছে। আমরা বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানো রয়েছে। আমরা অপরাধ উদঘাটনের চেষ্টা করছি।’

দেশ রুপান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.