জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন: আওয়ামী প্যানেলের ভরাডুবির নেপথ্যে

মুন্সীগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী প্যানেলের ভরাডুবি হয়েছে। জেলা আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে এতবড় ভরাডুবি নজীরবিহীন ঘটনা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোনো পদই পায়নি ক্ষমতাসীন দলের প্যানেল। বরং দুটি পদেই পরাজিত হয়েছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে। যা নিয়ে চারদিকে নানা রকম আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

জানা গেছে, এর পেছনের কারণ হিসেবে বিশ্বাসঘাতকতাকেই দায়ী করছেন আওয়ামী প্যানেলপন্থী অনেক আইনজীবী। অনেক দায়িত্বশীল ও নবীণ-প্রবীণ আইনজীবীদের অভিযোগ বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজেদের প্যানেলে ভোট দেননি আওয়ামী সমর্থিত অনেক আইনজীবী। আর এর পেছনে রয়েছে নানা ঘটনা ও উপ-ঘটনা।

গত সোমবারের এই নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে মাত্র পাঁচটি পদে পেয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। তাহলে প্রার্থী বাছাইয়ে কী ভুল ছিল? আর প্রার্থী যেই হোক, যেহেতু মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তবে কেন ভোট দেওয়া হলো দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে- এসব নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ১৭৫ ভোট করে পেয়ে আওয়ামী প্যানেলের দুজনই সহ-সভাপতি নির্বাচিত হলেও সভাপতি পদে শ.ম. হাবীবুর রহমান পেয়েছেন মাত্র ১২৪ ভোট। আর সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর অবস্থা ছিল আরো নাজুক। মাত্র ৮৩ ভোট পেয়ে তিন প্রার্থীর মধ্যে তৃতীয় হয়েছেন আওয়ামী প্রার্থী। অথচ এই পদেই বিজয় ছিল সবচেয়ে সহজ। কারণ বিএনপি সমর্থিত প্যানেল থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে বিএনপি সমর্থিত দুই প্রার্থীর মধ্যেই। বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ আলম ১২৭ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। আর বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের পারভেজ আলম পেয়েছেন ১২৫ ভোট। বিএনপির দুই সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর ভোট যোগ করলে দাঁড়ায় ২৫২ ভোট। তাহলে আওয়ামী প্যানেলের সাধারণ সম্পাদকের সাথে পার্থক্য হয় ১৬৯ ভোট।

এসব তথ্য দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ আইনজীবী বলেন, এখানেই পরিষ্কার, বিশ্বাসঘাতকতা কোনো পর্যায়ের হয়েছে! মূল সমস্যা ছিল বহুধা বিভক্তি। চেতনার কথা বললেও নির্বাচনে চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি। সব নির্বাচনে পাস-ফেল থাকবেই। তবে, কোনো নির্বাচনে ভরাডুবির বিশেষ কারণ থাকে। এ ক্ষেত্রে কাজ করেছে একে অপরের সাথে ব্যক্তিগত আক্রোশ, মনোমালিন্য ও সুবিধাবাদের বিষয়গুলো। আমার কাছে এই বিষয়গুলোই ভরাডুবির প্রধান কারণ মনে হয়েছে।

অ্যাডভোকেট শাহীন আমানুল্লাহ ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছেন, আওয়ামী প্যানেলের ভরাডুবির পেছলে মূল কারণ দলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। অনেকে ব্যক্তিগত সুবিধা পেতেই দলের বাইরের লোককে ভোট দিয়েছেন। তাছাড়া বিগত সময়ে আওয়ামী আইনজীবী প্যানেলেকে সুসংগঠিত না করা ও ভোটার বা সদস্যবৃদ্ধি না করাও আরো একটি কারণ। তিনি বলেন, আমরা অনেক দৌড়াদৌড়ি করে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য ফরম সংগ্রহ করি। কিন্তু বর্তমান সভাপতি এ সকল ফরম ড্রয়ার-বন্দি করে রাখেন। তাই নতুন করে সদস্য বৃদ্ধি না করাও ভোটে পরাজয়ের একটি কারণ। এছাড়া সভাপতি প্রার্থী দীর্ঘদিন দূরে থাকা আইনজীবীদের কাছে টেনেছেন, এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন আওয়ামীপন্থী আনিজীবীদের আরেকটি অংশ। তাই তারা দলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে দলীয় মনোনয়নের বাইরে ভোট দেওয়ায় আওয়ামী প্যানেলের ভরাডুবি হয়েছে।

কালের কন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.