প্রেমিকার স্ক্রিনশটে দাম্পত্য কলহ, স্ত্রীর সহযোগিতায় বাসায় ডেকে খুন

মুন্সিগঞ্জে স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদ (১৬) ওরফে জেসি হত্যা মামলার প্রধান আসামি প্রেমিক বিজয় রহমানকে (১৯) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এর আগে, গত শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ওয়ারী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩ এর একটি দল।

র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, গোপনে আবিদা নামে আরেক মেয়েকে বিয়ে করেন বিজয়। এতে বাগড়া দেয় প্রেমিকা জেসি। সে আবিদার মোবাইলে প্রেম সম্পর্কিত কথোপকথনের স্ক্রিনশটসহ ম্যাসেজ পাঠায়। এতে আবিদা-বিজয়ের মধ্যে শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। বিষয়টির মীমাংসার কথা বলে বাসার ছাদে ডেকে স্ত্রী আবিদার সহযোগিতায় শ্বাসরোধে জেসিকে হত্যা করে বিজয়।আজ রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় এসব তথ্য জানান র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এই র‍্যাব কর্মকর্তা জানান, গত ৩ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জের কোর্টগাঁও এলাকায় বন্ধুর বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। স্কুলছাত্রী জেসিকা হত্যার প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্বজনরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। পরবর্তীতে এ ঘটনায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব-৩। সেই ধারাবাহিকতায় গতরাতে রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জেসি হত্যার আসামি বিজয়কে গ্রেপ্তার করা হয়।গ্রেপ্তার বিজয় মুন্সিগঞ্জ সদরের আরিফুজ্জামান আরিফের ছেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে প্রেমিকা জেসিকে শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

জেসিকা মাহমুদ (বামে), আসামি বিজয় ও তার স্ত্রী আবিদা

র‍্যাব সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১৯ সালে একই স্কুলে পড়ুয়া অপর আসামি আবিদা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায় বিজয়। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে জেসিকার সঙ্গেও সে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। এর মধ্যেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবিদাকে গোপনে বিয়ে করে বিজয়।এদিকে বিজয়ের বিয়ের বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয় জেসি। পরে আবিদার ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন কথোপকথনের স্ক্রিনশট পাঠায়। বিষয়টি নিয়ে বিজয় ও আবিদার মাঝে দাম্পত্য কলহ, কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া-বিবাদ শুরু হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত বিজয় জানায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে জেসিকে উচিত শিক্ষা দিতে স্ত্রী আবিদার সঙ্গে আলোচনা করে বিজয়। পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ১ জানুয়ারি বিকেলে বিষয়টির মীমাংসা করার জন্য জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে নিয়ে আসে আবিদা। সেখানে আবিদার উপস্থিতিতে বিজয় ও জেসির মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে বিজয়-আবিদা মিলে জেসির গলা টিপে শ্বাসরোধে অজ্ঞান করে।পরিস্থিতি বুঝে জেসি ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়েছে মর্মে নাটক সাজায় আবিদা ও বিজয়। দুজনে মিলে জেসিকে অজ্ঞান অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে বাসার ভেতরে চলে আসে তারা।

পরে রাস্তার পাশে জেসিকে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করেন বিজয়ের চাচা। পরে বিজয় ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বাসা থেকে নেমে আসে।একপর্যায়ে বিজয় ও তার বাবাসহ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় জেসিকে মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জেসিকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর খবরে বিজয় ও আবিদা কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। জেসির মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে জানা যায়, জেসিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় বিজয় ও আবিদাকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন জেসির ভাই। মামলা রুজুর পর ৪ জানুয়ারি আবিদাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে সে জেল-হাজতে রয়েছে।

নিহত জেসিয়া মুন্সিগঞ্জ সদরের সেলিম দেওয়ানের মেয়ে। সে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল।গ্রেপ্তার বিজয় মুন্সিগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সে জেসি হত্যার পর থেকে জেলার সিরাজদিখান এলাকায় তার বন্ধুর বাড়িতে চারদিন আত্মগোপনে থাকে। সেখানে সে নিজেকে নিরাপদ মনে না করে পরবর্তীতে ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন আত্মগোপনে থাকে। সেখান থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসায় এসে আত্মগোপন করে। এরপর গতরাতে সেখান থেকে গ্রেপ্তার হয় বিজয়।

তবে এই হত্যার নেপথ্যে সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, জেসির সঙ্গে প্রেম সম্পর্কিত তথ্য, স্ক্রিনশর্ট পেয়ে স্ত্রী আবিদার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ শুরু হয় বিজয়ের। বিষয়টি মীমাংসা ও উচিত শিক্ষা দিতেই স্ত্রীর যোগসাজশে বাসার ছাদে ডেকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় জেসিকে। গ্রেপ্তার বিজয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

বিডি২৪লাইভ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.