মো. মাসুদ খান: মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া ফেরি সার্ভিস চার মাস আগে উদ্বোধন করা হয়। তারপর এক দিনের জন্যও চলেনি। এবার শীতের শুরু থেকে বলা হচ্ছে, নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি চলছে না। এর সমাধানে দেড় মাস আগে বিআইডাব্লিউটিএ মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ সীমান্তের চরকিশোরগঞ্জ প্রান্তে নদীতে ড্রেজিং শুরুর কথা বললেও কাজ শুরু হয়েছে গত সপ্তাহে।
গেল বছরের নভেম্বরে এই রুটে তৃতীয় দফায় ঘটা করে ফেরি সার্ভিস চালু করে বিআইডাব্লিউটিসি। এই ফেরির মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন মুন্সীগঞ্জ-শ্রীনগর হয়ে সরাসরি পদ্মা সেতুতে উঠতে পারবে। তাই এই রুট সচল রাখতে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে মুন্সীগঞ্জ ও গজারিয়া প্রান্তে সড়ক সংস্কার ও প্রশস্ত করা হয়।
গত বুধবার ড্রেজিংসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, শুধু মুন্সীগঞ্জ প্রান্তে ফেরিঘাট উপযোগী করতে সময় লাগবে এক মাসেরও বেশি। পরে গজারিয়া প্রান্তে ড্রেজিং শুরু হবে। ফলে ফের কবে নাগাদ পুরো রুটটিতে ফেরি চলাচল শুরু হবে তা বলতে পারছে না কেউ।
ঘাটে বেকার সময় পার করা সন্ধ্যামালতী ফেরির চালক সাগর হোসেন জানান, উদ্বোধনের দিন এই রুটে চলাচলের জন্য তিনটি ফেরি আনা হয়। এর মধ্যে ফেরি স্বর্ণচাঁপা কয়েকটি ট্রিপ দেয়। এর পরের দিন দু-তিনটি গাড়ি নিয়ে সারা দিনে দু-একটি ট্রিপ হলেও গেল চার মাসে আর একবারের জন্যও ফেরি চলেনি।
ফেরিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া রুটে যাওয়া-আসায় ৪৫ মিনিট সময় এবং ৩০ লিটার তেল লাগে। খরচ হয় তিন হাজার ৩০০ টাকার মতো। তৃতীয় দফায় ফেরি সার্ভিস চালুর পর একবারও এই খরচ উঠে আসেনি। ফেরি কর্ণফুলীর মাস্টার রবিউল হক বলেন, ‘উদ্বোধনের পর তিনটি ট্রিপ দিয়েছিলাম, এরপর চার মাস ধরে বেকার বসে আছি। সরকার নিয়মিত বেতন দিচ্ছে, তাই এখানেই বসে থাকতে হচ্ছে।’ তাঁর মতে, ড্রেজিংয়ের নামে বিআইডাব্লিউটিএ লোক-দেখানো কাজ করছে। তারা চাইলে তিন দিনে ড্রেজিং করে নৌপথ ঠিক করতে পারে।
ফেরিঘাটের অদূরে নোঙর করা ড্রেজিং হাউসবোটে গেলে দেখা যায়, কাজ বন্ধ রেখে বিশ্রাম নিচ্ছেন চালকসহ একাধিক শ্রমিক। এ সময় বিআইডাব্লিউটিএর ১৩৫ ড্রেজিং মাস্টার মোফাজ্জল হোসেন জানান, দেড় মাস আগে এখানে ড্রেজিং করতে আসেন তাঁরা। তবে কাজ শুরু করেন পাঁচ-ছয় দিন আগে। তাঁর ভাষায়, ‘ড্রেজিং করে বালু কোথায় ফেলব, কোথায় ফেললে আবার নদীতে আসবে না, এসব বোঝার ব্যাপার রয়েছে। তাই দেরি হয়েছে।’
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ২০০ ফুট বালু কাটা হয়েছে। আরো ৩০০ ফুট কাটার পরে বোঝা যাবে নতুন করে ডানে-বাঁয়ে কাটতে হবে কি না। এরপর গজারিয়া প্রান্তে ড্রেজিং করা লাগবে। সেখানে গেলে পরিকল্পনা করে বলা যাবে কাজ শেষ করতে কত দিন লাগবে।
জানা যায়, শুরুতে তিনটি ফেরি থাকলেও ফেরি স্বর্ণচাঁপা ভোলার ভেদুরিয়া-লাহারহাট রুটে নেওয়া হয়েছে দুই মাস ধরে। বাকি দুটি এখানে চার মাস ধরে পড়ে আছে। এই দুই ফেরির ২৬ জন শ্রমিকও দিন কাটাচ্ছেন শুয়ে-বসে।
বিআইডাব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ও মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া ফেরি সার্ভিসের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা জামাল হোসেন ড্রেজিং কার্যক্রম নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি জানান, যত দিন এই রুট সচল না হবে তত দিন এখানে ফেরি অপেক্ষমাণ রাখা হবে।
কালের কন্ঠ
Leave a Reply