মুন্সীগঞ্জের এক হাজার খামার হুমকির মুখে

* কোরবানির ঈদে বাড়তে পারে পশুর দাম * প্রণোদনা ও সহজ শর্তে ঋণ চান খামারিরা
মো. মাসুদ খান: গবাদি পশুর খাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় খামার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জের ডেইরি ফার্ম মালিকরা। এক বছরে কোনো কোনো গোখাদ্যের দাম ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ বেড়েছে। এই ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকলে অনেক খামারই বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এখানে ছোট-বড় ৯৯৯টি ডেইরি ফার্ম আছে।

খামারিরা বলছেন, এভাবে চললে দেশে মাংসের পাশাপাশি দুধেরও সংকট দেখা দেবে। তখন সরকারকে গুঁড়া দুধ আমদানির ওপর নির্ভর হতে হবে। এতে প্রভাব পড়বে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর। তাই ঋণ অথবা আর্থিক প্রণোদনা সহায়তা দিয়ে খামারিদের টিকিয়ে রাখার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

সরেজমিনে বিভিন্ন খামার ঘুরে জানা যায়, চড়া দামের কারণে খামারিরা প্রয়োজনমতো খাবার কিনতে পারছেন না। পশুকে খাবার কমিয়ে দেওয়ার কারণে দুধও কম পাওয়া যাচ্ছে। লৌহজংয়ের সাতঘড়িয়ার ডার্চ ডেইরি ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিল্লুর রহমান রিপন মৃধা বলেন, ‘দেশে দুধের চাহিদার বেশির ভাগই পূরণ করে ডেইরি ফার্মগুলো। এতে গুঁড়া দুধ আমদানি কমেছে। আমাদের লক্ষ্য তরল দুধের পাশাপাশি ভবিষ্যতে গুঁড়া দুধসহ দুগ্ধজাত সব ধরনের খাবার উৎপাদন করা। কিন্তু গোখাদ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, খামার টিকিয়ে রাখাই মুশকিল।’

তিনি জানান, ভালো মানের মাংস ও দুধ পেতে প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয় সয়াবিন, যা আমদানি করতে হয়। আমদানিকারকদের কাছ থেকে অনেক চড়া দামে এটা কিনতে হচ্ছে। বছরখানেক আগে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরের সয়াবিন এখন ৮৫ টাকা, ৪৩ টাকার ভুট্টা হয়েছে ৫০ টাকা, ১৭ টাকার কুড়া এখন ২০ টাকা আর ৬২ টাকার ছোলা কিনতে হচ্ছে ৮৪ টাকায়। একইভাবে লবণ ১৪ টাকা থেকে ২০ টাকায়, ৫৩ টাকার সাদা ডাবলি খোসা ৫৮ টাকায়, লাল ডাবলি খোসা ৫০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ টাকায়। এভাবে অন্যান্য আইটেমেরও দাম বেড়েছে। সব গোখাদ্যের দাম বাড়লেও সেই হারে দুধের দাম বাড়েনি।

নিউট্রি ফ্রেশ ডেইরি ফার্মের মালিক আব্দুর রশিদ সিকদার বলেন, ‘দুধ বিক্রি করে খরচ মেটানো কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী কোরবানির ঈদে বাধ্য হয়েই আমাদের পশুর দাম বাড়িয়ে দিতে হবে, নতুবা চালান ঘরে উঠবে না।’

খামারিদের দাবি, এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে সরকারকে খামারিদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সরকার আর্থিক প্রণোদনা দিয়েও খামারগুলোকে সহযোগিতা করতে পারে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কুমুদ রঞ্জন মিত্র জানান, গোখাদ্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার গবাদি পশুর খামারে বিশেষ ব্যাংকঋণও দিচ্ছে।

এই সংকটে খামারিদের করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দানাদার খাবার কম ব্যবহার করে আমরা তাজা ঘাস খাওয়ানোর পরামর্শ দিচ্ছি। এ বিষয়ে প্রশিক্ষণও দিচ্ছি।’

কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.