শুভ ঘোষ : ধলেশ্বরী নদীর স্বচ্ছ টলটলে সেই পানি আর নেই। এখন ধলেশ্বরীর পানির রং দেখলে মনে হয় ঢাকার বুড়িগঙ্গার অবস্থা হয়ে গেছে। চকচকে নিকষ কালো রংয়ের পানির দুর্গন্ধে টেকা দায়।
স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে দূষণ চলতে থাকলে মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী শিগগিরই বিষাক্ত বর্জ্যে পরিপূর্ণ একটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হবে। ধ্বংস হবে এই নদীসহ এখানকার অনেক জীববৈচিত্র। যদিও প্রশাসন দাবি করছে, দূষণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার (২৭ মার্চ) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তারপুর ও চর মুক্তারপুর এলাকার বিভিন্ন সিমেন্ট ফ্যাক্টরির অ্যাশ, ডাইং ও প্রিন্টিংসহ অসংখ্য শিল্প-প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত বর্জ্য পড়ছে ধলেশ্বরী নদী ও আশপাশের শাখা নদীতে। এর সঙ্গে জোয়ার-ভাটায় যুক্ত হচ্ছে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর বিষাক্ত পানি।
ফলে ইতিমধ্যে ধলেশ্বরীর পানি দূষিত হয়ে নিকষ কালো রং ধারণ করেছে। এ অবস্থায় ঢাকার বুড়িগঙ্গা ও নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার পর এবার মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীও বিপন্ন ও প্রাণহীন হয়ে পড়বে।
মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম নদীবন্দর ঘাট থেকে শুরু করে শহরের কাছে চর কিশোরগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত বেশ কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীর পানির পচা দুর্গন্ধ প্রকৃতি ও পরিবেশকে দূষিত করে তুলেছে।
শহরের উত্তর ইসলামপুর ও চরকিশোরগঞ্জ এলাকার ধলেশ্বরীর শাখা নদী কালিদাস সাগর নদীর পানি দুর্গন্ধযুক্ত। আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। ফলে বিপদে পড়েছেন এখানকার বেদে সম্প্রদায় ও জেলেরা।
অন্যদিকে পশ্চিম মুক্তারপুরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা টেক্সটাইল, ডাইং মিল ও সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোতে বর্জ্য পরিশোধনের প্লান্ট নেই। ফলে কারখানাগুলোর বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে নদীতে।
সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোতে খোলামেলাভাবে ক্লিংকার ও অ্যাশ জাহাজে লোড-আনলোড করা হচ্ছে। অ্যাশ উড়ে সরাসরি নদীর পানিতে মিশছে।
এছাড়া সিমেন্টের অ্যাশ উড়ে শহর ঘেঁষা ধলেশ্বরী নদীর তীরবর্তী হাটলক্ষ্মীগঞ্জ, নয়াগাঁও, মীরেশ্বরাই, মুক্তারপুর, চর মুক্তারপুরসহ আশপাশের এলাকার পরিবেশ দূষণ করে চলছে।
ধলেশ্বরীর তীরে গড়ে উঠা ফ্যাক্টরিগুলো নদীও দখল করে নিচ্ছে। একাধিক ফ্যাক্টরি নদী দখল করে নেওয়ায় ধলেশ্বরী নদী এখন সরু খালে পরিণত হচ্ছে। এতে দক্ষিণবঙ্গে যাতায়াতকারী ছোট-বড় লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান রাতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
আগে স্থানীয়রা এই নদীতে নিয়মিত গোসল করলেও এখন গোসল করলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর মাছ প্রায় মিলে না বললেই চলে।
এসব বিষয়ে জেলা পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য তৈরি হয় যেমন কেমিক্যাল কারখানা, টেক্সটাইল কারখানার ইটিপি বাধ্যতামূলক। যে বর্জ্যগুলো সৃষ্টি হবে ইটিপির মাধ্যমে সেগুলো পরিশোধন করে তারপর নদীতে ছাড়তে হবে। বিভিন্ন কারখানার ইটিপিগুলো সঠিকভাবে চলছে কি না সেগুলো আমরা মনিটরিং করে থাকি। তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জের সব কারখানাকে আমরা কিছু না কিছু জরিমানা করেছি।
পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তা বলেন, আমাদের এখানে কোনো ল্যাব নেই। ঢাকা থেকে আমাদের ল্যাবরেটরি টিম এসে কাজ করে দিয়ে যায়। তারা সব প্রতিষ্ঠান ভিজিট করে যে পানিটা নদীতে পড়ছে সেটির স্যাম্পল নিয়ে যায়। স্যাম্পল টেস্ট করে লিমিটের বাইরে যদি বেশি থাকে তাহলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
মিজানুর রহমান বলেন, সবাইকে সচেতন হতে হবে। নদীকে বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল ঢাকা মেইলকে বলেন, শুধুমাত্র যে ধলেশ্বরীর পাড়ের সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোর কারণে ধলেশ্বরীর পানি নষ্ট হচ্ছে তা না। বুড়িগঙ্গা নদীর দূষিত পানির কারণেও হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নদীতে যে ভেসেলগুলো চলে তারাও নষ্ট তেল বা মবিল এবং বর্জ্য ফেলে নদীর পরিবেশ নষ্ট করছে। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। নদীকে কিভাবে বাঁচানো যায় সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি রাখতে হবে। তবে আমরা এসব বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
ঢাকা মেইল
Leave a Reply