শ্রমিক সংকটে বিপাকে কৃষক

কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু: দেশের মধ্যাঞ্চলের বৃহত্তম আড়িয়ল বিলের পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে হয়েছে ধান চাষ। অনাবৃষ্টির কারণে প্রায় সব জমির ধান পেকে গেছে। তবে শ্রমিক সংকটে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। তাঁরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। তবে কালবৈশাখীর মৌসুম হওয়ায় বাকি ৪০ শতাংশ ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কৃষকদের সুবিধার্থে ছয়টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও চারটি রিপার মেশিন কেনা হয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল।

আড়িয়ল বিল পড়েছে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায়। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, শ্রীনগর বাজারসহ স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে শ্রমিকের সন্ধানে ঘুরে হয়রান। তিন বেলা খাবার ও জনপ্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মজুরি দিয়েও পর্যাপ্ত শ্রমিক মিলছে না।

আড়িয়ল বিলসংলগ্ন গাদিঘাটের কৃষক আবিদুল ইসলাম বলেন, তাঁর জমির ধান কাটা শেষ পর্যায়ে। অনেকে অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাচ্ছেন না।

ঘোষঘরের মুক্তার হোসেন বলেন, শ্রীনগর বাজারে গিয়েও শ্রমিক পাননি। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। শ্রমিকরা অন্য কৃষকদের ক্ষেতে ব্যস্ত। কিছু শ্রমিক পাওয়া গেলেও বাড়তি মজুরি চান।

কুড়িগ্রাম থেকে আসা আলমগীর হোসেন বলেন, তাঁরা ১৫ জন কৃষকের সঙ্গে চুক্তিতে বা দৈনিক ভিত্তিতে ধান কাটেন। শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একজনের ধান কেটেছেন। তিন বেলা খাবার ও জনপ্রতি ১ হাজার ৫০ টাকা নিয়েছেন তাঁরা।
কুকটিয়া গ্রামের ধানক্ষেতে কথা হয় শ্রমিক রফিক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, চুক্তিতে কৃষকের ৭ শতাংশ জমির ধান কাটছেন। জনপ্রতি ১ হাজার ১০০ টাকা মজুরি নিচ্ছেন।

এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় আগাম বন্যার পানি এখনও বিলে ঢোকেনি। ফলে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে ধান কাটতে পারছেন বলে জানান কৃষকরা। তবে তাঁরা ঝড়ের মৌসুম সামনে রেখে দ্রুত গোলায় ধান তুলতে চেষ্টা করছেন বলে জানান আনোয়ার হোসেন, মালেক মিয়াসহ একাধিক চাষি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার মেশিনের সুবিধা সবাই পান না। এসব মেশিন এখন সিন্ডিকেটের দখলে। এ ছাড়া ধান বিক্রির কেন্দ্র না থাকায় সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি তাঁরা।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোহসিনা জাহান তোরণ বলেন, প্রচণ্ড গরম পড়ায় প্রায় সব জমির ধান এবার একসঙ্গে পেকেছে। ফলে শ্রমিক সংকটে পড়েছেন চাষিরা। তাঁদের সুবিধার জন্য সরকার ভর্তুকি দিয়ে ছয়টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও চারটি রিপার মেশিন দিয়েছে। তবে আড়িয়ল বিলের মতো বিশাল এলাকার জন্য এগুলো যথেষ্ট নয়।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, শ্রীনগর উপজেলায় এ বছর ৯ হাজার ৯৭৭ হেক্টরের বেশি জমিতে নানা জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪২ হাজার টন চাল। এর মধ্যে আড়িয়ল বিলেই পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়ে। উৎপাদিত হবে ২০ হাজার টনের বেশি ধান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সান্ত্বনা রানী পুতুল বলেন, আড়িয়ল বিলে ধান উৎপাদনে গড় খরচ মণপ্রতি ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ৯৪০ টাকা দরে।

সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.