জয়দেব: রোঁদে ঘামে শরীর জর্জরিত তবুও মুখে হাসি

আল আমিন: জয়দেব, আবাসস্থল বিনোদপুর। তাকে অনেকেই চিনে, সেই ইয়াজউদ্দিন কলেজ থেকে শুরু করে হরগঙ্গ কে.কে গভঃ, মুন্সীগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় উচ্চ বালিকা, বিনোদপুর কলেজ, শহীদ জিয়া স্কুল-কলেজ চষে বেড়ায় মাত্র ০১ টাকা মূল্যের সিঙারার বোঝা মাথায় নিয়ে।

এমন কাঠ ফাটা রোঁদে ঘামে শরীর জর্জরিত। তবুও মুখে হাসি লেগে আছে, তবুও বারংবার সৃষ্টিকর্তার প্রতি সন্তুষ্টচিত্ত বাক্য ছুড়ে মারছে।

সৃষ্টিকর্তা তাদের অভাবের ঝোলায় এক চিলতে সুখ দিতে ভুলেননি। সৃষ্টিকর্তার হিসেবটা বরাবরই সমানুপাতিক। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, কতদিন যাবৎ এই সিঙারা বিক্রি করছেন, সে উত্তরে বলেছিলো, ৪৫ বছর আগের কথা, যখন চালের দাম ০১ টাকা কেজি ছিলো আর তখন সে ২০ টা সিঙারা বিক্রি করতো ০১ টাকায়।

তখন তার বাবা ১৫ টাকা মাসিক বেতনে অন্যের বাড়ীতে কাজ করতেন। বুক ভরা কষ্ট নিয়ে তার বাবা তাকে বলেছিলেন, “চালের কেজি এক টেকা হইয়া গেছে রে তোদের মনে হয় আর তিন বেলা খাওয়াইতে পারবো না।”

জয়দেব সাহেব তখন থেকেই হাল ধরেছিলেন। কিশোর বয়সে বাবার সংসারের হাল ধরে বুড়ো বাবা হয়েও আজ ৪৫ বছর পরে সেই হাল ছেড়ে দেননি , এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন আর এক ছেলেকে পড়াশুনা শেষ করিয়েছেন।

সেই ছেলেকে নিয়ে তার গর্বের অন্ত নেই। সেই ছেলে এখন চাকুরী করলেও তার টাকার হিসেব বাবা জয়দেব আমলের বাইরেই রাখেন।

তিনি চান তার ছেলের টাকা তার কাছেই সঞ্চিত থাকুক তার ভবিষ্যতের মঙ্গলের জন্য। জয়দেব সাহেব চায়, সে যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন তার মমতার ছায়ায় সুরক্ষিত থাকবে তার পরিবার।

শরীর থেকে হাজার ফোটা ঘাম ঝরে গেলেও সেটা নিয়ে এক ফোটা আফসোস নেই তার। ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকলেও তার ভাষ্যমতে সে সুখে আছে, অনেক বেশি সুখে আছে।

পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ জয়দেবের জম্ম হোক আর এমন বাবার সংখ্যা হোক সন্তানদের সমানুপাতিক। যাদেরকে অর্থের মোহ ছুতে পারেনি, যারা জানেনা বিলাসিতা শব্দের অর্থ, তবুও তাদের নাম পৃথিবীর সুখিদের তালিকায় উপরের দিকেই থাকে।

একুশের আলো

Comments are closed.