মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার আউটশাহী ইউনিয়নের মামরদুল গ্রামের একটি রাস্তা তৈরির প্রকল্পে বরাদ্দের ৮০ ভাগ অর্থই লোপাট হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় চেয়ারম্যান সেকান্দর বেপারী প্রকল্পবাস্তবায়ন কমিটিকে বরাদ্দের ১ লক্ষ টাকার মধ্যে মাত্র ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। ফলে রাস্তাটি তৈরি করতে হয়েছে এলাকাবাসীর টাকায়। এ নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে তিব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অন্যদিকে, রাস্তা তৈরিতে সরকারী অনুদান না পেয়ে মামারদুল গ্রামবাসী নিজেরাই চাঁদা তুলে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ব্যায়ে রাস্তা তৈরি করেছেন। এর পরেও ওই রাস্তা দিয়ে তারা হাটতে পারছেন না। এলাকাবাসী জানায়, চেয়ারম্যান সেকান্দর বেপারীর বন্ধু খোরশেদ শেখ রাস্তার প্রবেশ মুখ দখল করে ঘর তৈরি করেছেন। ফলে রাস্তাটি অকার্যকর হয়ে পরেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা সেকান্দর বেপারীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে, দখলকারী তার ছোট বেলার বন্ধু, তাই তার কিছুই করার নেই বলে জানান। এই রাস্তাটি সচল হলে গ্রামের পাঁচ থেকে ছয় শতাধিক মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করতে পারবে বলেও জানান স্থানীয়রা।
প্রকল্পের নথি অনুযায়ী, ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে আউটশাহী ইউনিয়নের মামারদুল গ্রামের হালদার বাড়ি থেকে খোরশেদ শেখের পুড়াতন বাড়ির পুকুরপার হয়ে সুবচনী-চাঁদের বাজার পাকারাস্তা পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মান প্রকল্পের জন্য ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে স্থানীয়দের টাকায় এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বরাদ্দের এক লক্ষ টাকা প্রদানের আবেদন করে প্রকল্পবাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি লাইলি আক্তার (স্থানীয় মহিলা মেম্বার)। পরে ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ২৭৩৮৮০৬ নম্বর চেকের মাধ্যমে ওই টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে চেয়ারম্যান সেকান্দর বেপারী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়। স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রকল্পবাস্তাবায়ন কমিটির সভাপতি লাইলি আক্তারের নামে চেক ইস্যু করা হলেও তাকে মাত্র ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। বাকি টাকা চেয়ারম্যানই রেখে দিয়েছেন বলে স্থানীয় ওই সূত্রটি জানায়।
অভিযোগে আরো জানা গেছে, শুধু এই প্রকল্পটিই নয়, ইউনিয়নের আরো কয়েকটি রাস্তার প্রকল্পে চেয়ারম্যান সেকান্দর বেপারী স্থানীয়দের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাজ করেছেন। পরে সরকারী বরাদ্দের টাকা পাওয়ার পর তা আর ফেরৎ দেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্পবাস্তবায়ন কমিটির এক সদস্য বলেন, চেয়ারম্যান সেকান্দর বেপারী আমাদের দিয়ে কাজ করিয়েছেন, তবে ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দের মাত্র ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এখন এলাকার মানুষের কাছে আমাদের জবাব দিতে হচ্ছে। ওনাকে (চেয়ারম্যান) বললে ম্যানেজ করতে বলেন। ২০ হাজার টাকায় রাস্তা কিভাবে হলো, এমন প্রশ্নে জবাবে প্রকল্পবাস্তবায়ন কমিটির এই সদস্য বলেন, গ্রামবাসী চাঁদা তুলে রাস্তা টাকা দিয়েছে। খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। তিনি আরো বলেন, সেকান্দর বেপারী রাস্তার কাজ শুরু করার আগে এলাকার মানুষদের বলেছেন, আপনারা এখন টাকা দেন, কয়েক ধাপে বরাদ্দ দিয়ে আপনাদের টাকা পরিশোধ করে দেব। তবে কাজ শেষের পর তিনি মাত্র ২০ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়েছেন (এ সংক্রান্ত একটি কথোপকথনের অডিও এই প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে)।
রাস্তা দিয়ে হাটতে পারছেন না বলে অভিযোগ এনে স্থানীয় এক ব্যাক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা চাঁদা তুলে রাস্তা তৈরি করেছি। এর পরেও ওই রাস্তা দিয়ে হাটতে পারছি না। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান সেকান্দর বেপারীর বন্ধু খোরশেদ শেখ রাস্তার প্রবেশ মুখে ঘর তুলে দখল করে রেখেছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা বহুবার তার কাছে (সেকান্দর বেপারী) গিয়েছি, তিনি বলেছেন, ও (খোরশেদ) আমার ছোট বেলার বন্ধু, তাই আমি ওকে এখন কিছুই বলতে পারবো না। বিষটি নির্বাচনের পরে দেখবো বলে স্থানীয়দের জানিয়ে দেন সেকান্দর বেপারী।
এ বিষয়ে আউটশাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেকান্দর বেপারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানায় এ সকল খবর মিথ্যা বনোয়াট। অফিসিয়্যাল খরচ বাদে আমি ওই ১লক্ষ টাকার প্রকল্পের বাকি টাকার কাজ করেছি।
জনকন্ঠ
Leave a Reply