শ্রীনগরে নাইট গার্ডের হাতে খাদ্য গুদামের নিয়ন্ত্রন

ওসি এলএসডি’র চেয়ারে বসে সামলান পুরো অফিস!
আরিফ হোসেন: শ্রীনগর খাদ্য গুদামের নাইট গার্ড জামাল হোসেন। হাকান দামী মোটর সাইকেল। ইস্ত্রি করা শার্টের ভাজে ভাজে মাখেন দামী খুশবু। মাঝে মাঝে গুদাম চত্তরে বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে বসান রঙ্গীন পানির আসর। স্থানীয়দের খুশি করতে ঢাকা থেকে ভাড়া করে আনেন পতিতা। জায়গা করে দেন নিজের ঘরে। বিনিময়ে নির্বিঘ্নে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের প্রভাব। গুদামের ভাল মানের চাল পাচার করে দিয়ে ঢুকান নিন্ম মানের চাল। শ্রীনগর ফেরি ঘাটে অবস্থিত নির্জন খাদ্য গুদামে মাদক, নারী, চোরা কারবারী সবই চলে রাতের আধারে। দিনের বেলায়ও জমাল হোসেনের এই ডাট বজায় থাকে। অফিস করেন ওসি এলএসডি’র চেয়ারে বসে। প্রকাশ্যে কিনে নেন বিভিন্ন প্রকল্পের বিপুল পরিমান খাদ্যশস্য।

ব্যাংকের নিজ হিসাবে থেকে মিল মালিক ও পাইকারদের কাছে টাকা পাঠিয়ে আনেন নিন্ম মানের চাল। সূত্র জানায়, এক বছরে তার হিসাবে লেন দেনের পরিমাণ প্রায় কোটি টাকা। এভাবেই চলছে চার বছর। তার এসকল অপকর্মের সুযোগ করে দিয়েছেন খোদ ওসি এলএসডি হাসান মাহমুদ সোহেল। তার বাসস্থান পার্শ্ববর্তী উপজেলা সিরাজদিখান হওয়ায় তিনি প্রায় রাতে খাদ্য গুদামে অবস্থান না করায় নাইট গার্ড জামাল হোসেন এসকল কাজ করতে সাহস পাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে অপর একটি সূত্রের দাবী, ওসি এলএসডি হাসান মাহমুদ সোহেলকেও নাইটগার্ড জামাল হোসেন কোনরকম মূল্যায়র করেননা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে , মোঃ জামাল হোসেন ২০১৩ সালে শ্রীনগর খাদ্য গুদামে নাইটগার্ড হিসাবে যোগদান করেছেন। যোগদানের পর থেকে নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছেন দেদারছে। দুই বছর আগে এখানে ওসি এলএসডি হিসাবে এখানে যোগ দেন হাসান মাহমুদ সোহেল। তার অবর্তমানে রাতের আধারে খাদ্য গুদামের কোয়ার্টারে বসে অসাজিক কার্যকলাপের আখড়া। অপরদিকে গুদামের চাবি থাকার কারণে রাতের আধারে বস্তা পাল্টিয়ে ঢুকান নিন্ম মানের চাল। ভাল চাল বিক্রি করে দেন খোলা বাজারে।

সূত্র জানায়, এর প্রমান রয়েছে সোনালী ব্যাংক শ্রীনগর শাখার হিসাব নং-৩৭১৩৫০১০১০৩২২। তার একাউন্ট থেকে গত ২০১৬ সালের মার্চ মাস থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা লেনদেন করেছেন বিভিন্ন মিল মালিক ও পাইকারদের সাথে। তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটির দাম প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা। গত বছর সারকার ১০টাকা কেজিতে চাল বিক্রির কর্মসুচির সময় গুদাম থেকে ভাল চাল রাতের আধারে বিভিন্ন চোরাকারবারীর কাছে বিক্রয় করেছেন বিনা বাধায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানান, গুদামে যে ট্রাকে খাদ্যের চালান আসে তাতে ওসি এলএসডির সাক্ষর করার কথা থাকলেও ওসি এলএসডির অনুপুস্থিতিতে তাতে স্বাক্ষর করেণ নাইট গার্ড জামাল হোসেন। এক কথায় খাদ্য গুদামের পুরো নিয়ন্ত্রন এখন তার হাতে।

শ্রীনগর খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি হাসান মাহমুদ সোহেল রাতে নাইট গার্ডের কাছে গুদামের চাবি থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ওসিএলএসডির চেয়ারে বসে অফিস করার অধিকার নাইট গার্ডের নেই।

উপজেলা খাদ্য অফিসার খলিলুর রহমান বলেন, ওসিএলএসডি সব সময় অফিসে থাকেননা এটা ঠিক। তিনি আমার সাথেও যোগাযোগ করেননা। তাছাড়া নাইট গার্ডের বিরুদ্ধে মাদক, নারী ও চোরাকারবারী সহ নানা রকম দুর্নীতির অভিযোগ আগেও শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সাথে আলোচানা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

এব্যাপারে নাইটগার্ড জামাল হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ওসি এলএসডি আমার কাছে চাবি থাকার যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়। মাদক, নারী ও চোরা কারবারী সমন্ধে তিনি কিছু জানেননা। তবে ওসি এলএসডির চেয়ারে বসতেই পারি। এটা কারো জন্য নির্দ্দিষ্ট নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.