রামপালের বিখ্যাত সাগর কলা

একদা মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর তথা রামপালের কলার দেশ-বিদেশে খ্যাতি ছিল। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রামপালের কলা যেত মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকা ও আমেরিকায়। সেই কলা খেতে এতই সুস্বাদু ছিল যে, একবার খেলে মুখে লেগে থাকত অনেকটা সময় ধরে। রামপাল বিশ্বজুড়ে পরিচিত হয়ে ওঠে তার মাটিতে জন্মানো কলার কারণেই।

মুন্সীগঞ্জ শহরের পূর্বাংশের এলাকাগুলো যেমন দেওভোগ, শিলমন্দি, বৈখর ছাড়িয়ে বল্লাল রাজার রামপালের প্রায় সব বাড়িতেই ছিল একটি করে কলার বাগান। এক চিলতে ফাঁকা জায়গা পেলেই কলাচাষিরা সেটাকে কাজে লাগাতেন কলা চাষ করে। বেশ মজাদার ছিল রামপালের কলা। এর ভেতরে এক অপূর্ব সুঘ্রাণ পাওয়া যেত, যা আহারের তৃপ্তি মেটাত। তবে দিনগুলো আজ কিছুটা হলেও মলিন। কেননা অনেকেই এখন কলা চাষ করেন না।
দেওভোগ এলাকার হাজী জহির উদ্দিনের বাড়ির চারপাশে ছিল কলাগাছ। গোটা বাড়িটিই ছিল যেন কলাবাগান। বাড়ির পেছনে কিংবা সামনে কোথাও তিল পরিমাণ ফাঁকা জায়গা খালি রাখতেন না তিনি। শখের বশেই কলার চাষ করতেন। এখন তিনি নেই। কালের আবর্তে হাজী জহির উদ্দিনের মতো আরও অনেকে আজ পৃথিবী ছেড়ে গেছেন। সঙ্গে হারিয়ে গেছে কলার আবাদ।

ডিঙ্গিনৌকায় কলা

মুন্সীগঞ্জের চারপাশে রয়েছে অনেক নদ-নদী। দক্ষিণবঙ্গ কিংবা রাজধানীর নৌ-যোগাযোগের ট্রানজিট পয়েন্ট নদীবেষ্টিত এই জেলা। পদ্মা-মেঘনা-ধলেশ্বরী পরম মমতায় জড়িয়ে আছে মুন্সীগঞ্জকে। বড় লঞ্চ, স্টিমারগুলো যখন মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটের কাছে ভিড়ত, তখন ডিঙ্গিনৌকায় করে বিকিকিনি হতো এই রামপালের কলা। নৌকায় ফেরিওয়ালারা পসরা জমাতেন রামপালের কলার। কলার হাঁকডাকে মন কাড়া হতো লঞ্চযাত্রীদের। তারপর ওই কলার স্বাদ নিয়ে খেয়ে প্রাণ জুড়াতেন যাত্রীরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পাইকাররা এখান থেকে কিনে নিতেন সেসব কলা।

মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রমতে, পাঁচ বছর আগেও জেলায় ৫৭৫.৯৫ একর জমিতে কলা চাষ হতো। কলা চাষাবাদের জমিতে অধিক লাভজনক ফসল বুনতে শুরু করা থেকেই রামপালের কলার চাষ বিলীন হওয়ার পথে দাঁড়ায়। উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের রগুরামপুর এলাকার আউয়াল বেপারী জানান, পরিবারের সবাই একসময় কলা চাষ করত। তাদের পরিবারের সব সদস্যই এ কাজে আনন্দ খুঁজে পেতেন। বাড়ির আশেপাশেও কলা বুনতেন পরিবারের সদস্যরা। সে সময় বেশ লাভজনক ছিল কলাচাষ। এর মধ্যে ছিল সবরি, কবরি, সাগর, চাঁপা ও আনাজি কলা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এক সময় এসে তাদের কলা চাষের আয়োজেনে ভাটা পড়ে। এখন সেখানে চাষ করা হচ্ছে নানা ধরনের সবজি।

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি উপজেলার আবদুল্লাপুর ইউনিয়নের কুমারপাড়ার কলাচাষি আলাউদ্দিন তাদের বংশপরম্পরায় রামপালের কলার চাসের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চান। পুরো নাম আলাউদ্দিন মোল্লা। তিনি বিশ্বাস করেন, তার পক্ষে সম্ভব রামপালের কলার সুনাম ধরে রাখা। আবার তার দেখাদেখি আরও অনেকে ফিরে আসবে কলা চাষেÑএমনই তার প্রত্যাশা। আলাপকালে তিনি জানান, অর্ধশত বছর ধরে তার পরিবারের সদস্যরা এ কলা চাষ করছেন।

শেখ মোহাম্মদ রতন
শেয়ার বিজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.