নন মেট্রিক ওষুধ বিক্রেতা যখন ডাক্তার!

মুন্সীগঞ্জ শহরের হাটলক্ষীগঞ্জ এলাকায় ওষুধ বিক্রেতা মো. রাজন শেখ দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজন শেখ এর শিক্ষাগত যোগ্যতা নন মেট্রিক। নেই কোন ড্রাগ লাইসেন্স। নিয়ম অনুযায়ী বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) এর সনদ ব্যতীত কেউ নামের আগে ডা. ব্যবহার করতে পারেনা।

এদিকে হাটলক্ষীগঞ্জ বাজারে অবস্থিত নাফিস ফার্মেসীতে নামের আগে ডা. ব্যবহার করে ১০ বছর ধরে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে ওষুধ বিক্রেতা কথিত ডা. মো. রাজন শেখ শান্ত।

সরেজমিনে তার দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ওষুধের দোকানের সামনে লেখা রয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত ডা. মো. রাজন শেখ (শান্ত)। ডিগ্রী হিসাবে লিখেছেন আরএমপি. এম এ এফ. পি. এইচ. সি এস সি, এইচ সি এন্ড ( স্বাস্থ্য ও পল্লী চিকিৎসক)। যে সকল চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন তা হলো মা, শিশু, চর্ম, যৌন, নাক, কান, গলা ইত্যাদি । আর এসব রোগের জন্য রাজন ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত মার্কস মেডিকেল এন্ড ট্রেনিং সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে সাইনবোর্ড এবং ব্যক্তিগত ভিজিটিং কার্ডে উল্লেখ করছেন।

এছাড়া তিনি ভিজিটিং কার্ডে সরকারি মনোগ্রামও ব্যবহার করে আসছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেন তিনি। পাশাপাশি টঙ্গিবাড়ি উপজেলার আমতলী মসজিদের পাশে মা মেডিসিন কর্নারেও সাপ্তাহে চেম্বার করেন বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাটলক্ষীগঞ্জ এলাকার ছদ্দনামধারী রিপন এবং সাইফুল জানান, মো. রাজন শেখ এসএসসি পাশ করেছে কিনা সন্ধেহ রয়েছে। অথচ সকল রোগের চিকিৎসা দিয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করলেও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা আদৌও নেয়নি। তার দোকানে বিক্রি হয় নিষিদ্ধ যৌন উত্তেজক সিরাপ ও ট্যাবলেট।

কথিত এই চিকিৎসকের ঔষধ সেবন করে মনের অজান্তে রোগীরা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় চা বিক্রেতাসহ আরও অনেকেই।

এ ব্যাপারে রাজন শেখ জানান, আমি নামের আগে ভুলে ডাক্তার লিখেছি। এটা মুছে ফেলব। সরকারি মনোগ্রাম ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ট্রেনিং নিয়েছি তাই সরকারি মনোগ্রাম ব্যবহার করি এটা কোন সমস্যা না। আমি সব ধরনের রোগীদের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র দেই। রোগ জটিল হলে রোগীদের সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি।

বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েসন (বিএসএ) মুন্সীগঞ্জ জেলা সভাপতি ডা. মো. আক্তার হোসেন বাপ্পি জানান, একটা পর্যায়ে পৌঁছালে সরকারি ডাক্তারগণ এই মনোগ্রাম ব্যবহার করতে পারে। যে কেউ এই সরকারি মনোগ্রাম ব্যবহার করতে পারবেনা।

সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কয়েকদিনের মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

দৈনিক অধিকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.