হারিয়ে যাচ্ছে ধলেশ্বরী নদীর টলটলে পানি!

মুন্সীগঞ্জ শহর ঘেঁষা ধলেশ্বরী নদীর স্বচ্ছ টলটলে পানি এখন দূষিত হয়ে পড়েছে। শহরের উপকণ্ঠ চর মুক্তারপুরে বিভিন্ন টেক্সটাইল মিলসের কেমিক্যাল মিশ্রিত তরল বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অপর দিকে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন পয়েন্টের ড্রেনের ময়লা পানি সরাসরী নদীতে গিয়ে পরছে এতে টলটলে পানির রূপ হারাচ্ছে।

বর্তমানে মুক্তারপুর ও চর মুক্তারপুরে সিমেন্ট ফ্যাক্টরির অ্যাশ, ডাইং ও প্রিন্টিংসহ অংসখ্য শিল্প-প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়েছে ধলেশ্বরী নদী ও আশপাশ শাখা নদীর পানি

এর সঙ্গে জোয়ার-ভাটায় যুক্ত হয়েছে একদিকে বুড়িগঙ্গা নদী, অন্যদিকে শীতলক্ষ্যা নদীর বিষাক্ত পানি। ফলে ইতিমধ্যে ধলেশ্বরী নদীর পানি দূষিত হয়ে নিকষ কালো রঙ ধারণ করেছে। এ অবস্থায় ঢাকার বুড়িগঙ্গা এবং নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পর এবার মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী বিপন্ন হতে চলেছে।

মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম নদী বন্দর ঘাট থেকে শুরু করে শহরের কাছে চর কিশোরগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত দীর্ঘ দুই কিলোমিটার এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর পানি পচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষিত করে তুলেছে। শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুর এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর দু’পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা একাধিক টেক্সটাইল ও ডাইং মিলের নির্গমনকৃত বিষাক্ত বর্জ্য গিয়ে পড়ছে ধলেশ্বরীর বুকে। এভাবেই কারখানার বর্জ্য ও সিমেন্টের অ্যাশ ধলেশ্বরীকে বিপন্ন করে তুলেছে।

এ দিকে শহরের উত্তর ইসলামপুর ও চরকিশোরগঞ্জ এলাকার ধলেশ্বরীর শাখা নদী কালিদাস সাগর নদীর পানি থেকে দূরগন্ধ বের হচ্ছে। আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অলস সময় পার করছে এই এলাকার বেধে সম্প্রদায়ের লোকজন।

পশ্চিম মুক্তারপুর এলাকা ঘুরে আরও দেখা গেছে, শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুর এলাকায় গড়ে ওঠা টেক্সটাইল, ডাইং মিল ও সিমেন্ট তৈরির ফ্যাক্টরিগুলোর বিষাক্ত বর্জ্য নির্গমনের পরিবেশবান্ধব কোনো ব্যবস্থা নেই। ফ্যাক্টরিগুলোতে বর্জ্য পরিশোধিত ট্রিটমেন্ট প্লান্ট না থাকার কারণে সরাসরি ওই বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। তাছাড়া সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোর অ্যাশ উড়ে সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ছে। সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে খোলামেলাভাবে ক্লিংকার ও অ্যাশ জাহাজে লোড-আনলোড করা হচ্ছে।

এ ছাড়া সিমেন্টের অ্যাশ উড়ে এসে শহর ঘেঁষা ধলেশ্বরী নদীর তীরবর্তী হাটলক্ষীগঞ্জ, নয়াগাঁও, মীরেশ্বরাই, মুক্তারপুর, চর মুক্তারপুরসহ আশপাশ এলাকার পরিবেশ দূষণ করে চলছে। অন্যদিকে ধলেশ্বরী নদীর তীরে গড়া ফ্যাক্টরিগুলো নদীতীর দখল করে নিচ্ছে। স্থাপিত একাধিক ফ্যাক্টরি নদী দখল করে নেওয়ায় ধলেশ্বরী নদী এখন সরু খালে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের ছোট-বড় লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান রাতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে। গোসল করার ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হচ্ছে সমস্যা। মাছ নদীতে না থাকায় এখন আর মাছ শিকারে আসছে না জেলেরা।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিষ্ট আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, যে সমস্থ প্রতিষ্ঠানের বর্জ তৈরি হয় যেমন কেমিক্যাল কারখানা, টেক্সটাইল কারখানার ইটিপি বাধ্যতা মূলক। ইটিপি হচ্ছে যে বর্জ গুলো সৃষ্টি হবে সে সমস্থ বর্জ গুলো পরিশদন করে তার পর নদীতে ছাড়তে হবে।

এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের ইটিপি প্রয়োজন যেমন আইডিয়াল টেক্সটাইল, মদিনা টেক্সটাইল, বর্ণালী টেক্সটাইল, পিডিলাইট কারখানা,এশটিভ ফাইন কেমিক্যাল, মদিনা ড্রাইং এই গুলো করখানার তরল বর্জ সৃষ্টি হয় কিন্তু এই সব প্রতিষ্ঠানের ইটিপি রয়েছে। তবে ইটিপি গুলো সঠিক ভাবে চলতেছি কিনা সেগুলো দেখার বিষয় গুলো আমরা মনিটরিং কলে থাকি। তিনি বলেন মুন্সীগঞ্জের সকল করখানাকে আমরা কিছু না কিছু জরিমানা করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এই খানে কোন ল্যাব: নেই ঢাকা থেকে আমাদের ল্যাবরেটরি টিম এসে কাজ করে দিয়ে যায়। তারা সকল প্রতিষ্ঠান ভিজিট করে যে পানি টা নদীতে পরছে সেটির সেম্পল নিয়ে যায়। সেম্পলটি টেস্ট করে (পানির পেরামিট) লিমিটের বাইরে যদি বেশী থাকে তাহলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, বর্তমানে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সাবাইকে এগিয়ে আসতে হবে নদীকে বাচাতে।

এ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা বলেন,সে খানে ধলেশ^রী নদীর বর্তমান চিত্র উত্থ্যাপন করা হয়েছে। শুধু মাত্র যে ধলেশ্বরীর পাড়ে যে সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর কারনে ধলেশ^রীর পানি নষ্ট হচ্ছে তা না। বুড়িগঙ্গা নদীর দূষিত পানির কারনে ও হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন নদীতে যে ভেসেল গুলো চলে সেখানে ও তারা নষ্ট তেল বা মবিল এবং বর্জ ফেলে দিয়ে নদীর পরিবেশ নষ্ট করছে। তিনি আরও বলেন সবাইকে সতেচন হতে হবে। নদীকে কিভাবে বাচানো যায় সে দিকে সবাইকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

বিডি২৪লাইভ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.