কে হচ্ছেন টঙ্গিবাড়ীর নৌকার মাঝি

মোজাম্মেল হোসেন সজল: টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী-এই নিয়ে দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল বিরাজ করছে। বসে নেই সম্ভাব্য প্রধান দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীও। এদের একজন ৯০-এর স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান জগলুল হালদার ভুতু। অপরজন বর্তমান চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কাজী আব্দুল ওয়াহিদ। এই দুই প্রার্থীই নৌকার টিকিট পাওয়ার আশায় জেলা নেতা থেকে কেন্দ্রীয় নেতাপর্যায়ে জোর তদবির শুরু করেছেন। জগলুল হালদার ভুতু তার প্রার্থিতা জানান দিলে নড়েচড়ে বসেন অপর প্রার্থী কাজী আবদুল ওয়াহিদ। স্থানীয়ভাবেও এই দুই প্রার্থীকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তবে, নৌকার মাঝি যেই হোক-চতুর্থ ধাপের আগামী নির্বাচনে দুইজন প্রার্থী হচ্ছেন- এটা অনেকটা নিশ্চিত।

ওদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে এই দুই চেয়ারম্যান ও অপর দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদের একাধিক প্রার্থী দোয়া ও সমর্থন চেয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। এই উপজেলায় বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও আগামী নির্বাচনে তিনটি পদেই আওয়ামী লীগের স্থানীয় দলীয় নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন-এটা নিশ্চিত। দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকরা জানিয়েছেন, গত ৩১শে জানুয়ারি টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় দলীয়ভাবে প্রার্থী নির্ধারণে তিনটি পদেই জেলা আওয়ামী লীগ তৃণমূলের মতামত নিতে কাউন্সিল ডাকেন।

এই কাউন্সিলের পক্ষপাতিত্ব ও অনিয়মের অভিযোগ এনে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জগলুল হালদার ভুতু এবং ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. নাহিদ খান জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল বয়কট করেন। এতে বর্তমান চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কাজী ওয়াহিদের নাম এককভাবে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. মহিউদ্দিন কেন্দ্রে পাঠান। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান কাজী ওয়াহিদের নাম বাদ রেখে জগলুল হালদার ভুতুসহ তিনজনের নাম প্রস্তাব করে আরেকটি চিঠি পাঠান কেন্দ্রে। এসব ঘটনায় চেয়ারম্যান প্রার্থী জগলুল হালদার ভুতু কেন্দ্রে একটি লিখিত অভিযোগও করেন। নির্বাচনকে ঘিরে এই উপজেলায় জগলুল হালদার ভুতু ও কাজী আবদুল ওয়াহিদ গ্রুপের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ি চলছে।

জগলুল হালদার ভুতু স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক বর্ষীয়ান নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৯৭৭ সালে দিঘীরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৫ বছর ছিলেন টঙ্গিবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৩ সাল থেকে একই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও, বিভিন্ন স্কুল, মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ নানা সামাজিক ও জনহিতকর কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আছেন। ইঞ্জিনিয়ার কাজী আবদুল ওয়াহিদ গত ১০ বছর ধরে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ৮ বছর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি ফান্ডের টাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

ওদিকে, ওই কাউন্সিলে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সর্বোচ্চ ভোটে প্রথম হয়েছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এমিলি পারভীন। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাহাত রুবেল খান তৃণমূলের ভোটে প্রথম হয়েছেন। পরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সারা দেশে ভাইস চেয়ারম্যান পদ দুইটি দলীয় প্রতীকে না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

এদিকে, আগামী নির্বাচনে এই উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এমিলি পারভীন, সোনারং-টঙ্গিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হেনা আক্তার, অ্যাডভোকেট নাসিমা আক্তার প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন। এদের মধ্যে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এমিলি পারভীন। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান রাহাত খান রুবেল এবং টঙ্গিবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মো. নাহিদ খান। এ ছাড়াও প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন, আতিকুর রহমান শিল্পীসহ আরো একাধিক।

মানবজমিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.