বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: আবার ঢাকার কাছে জমি খোঁজা হচ্ছে

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার কাছে মাদারীপুর বা শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হচ্ছে না। তবে ঢাকার আশপাশে এ বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য আবার জমি খোঁজার কাজ শুরু করেছে জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোয়েই লিমিটেড।

বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নতুন জমি নির্বাচন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গত মাসে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এবার ঢাকার আশপাশে এ প্রকল্পের জন্য জমি নির্বাচন করবে। ঢাকার পাশে আগে যেসব স্থান খোঁজা হয়েছে সেগুলো নিয়ে এবং নতুন স্থান নির্বাচন করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ শিগগিরই বৈঠকে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক গতকাল শনিবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকার আশপাশে এখন জমি খোঁজা হচ্ছে। আগে থেকেই বলা হচ্ছিল তা খুঁজতে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি বৈঠকে বসতে চাইছি। এর আগে যেসব স্থানে জমি দেখা হয়েছে সেগুলোর একটিতেও বিমানবন্দর নির্মাণ করা সম্ভব হবে না।’

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, খাসজমির সংকট ও ঘনবসতিতে হাজার হাজার মানুষ ও তাদের বাড়িঘর উচ্ছেদকে বাধা বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের কোনো জমিতে এ বিমানবন্দর করা সম্ভব হচ্ছে না।

মাদারীপুরের শিবচরের চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ী ও বন্দখোলায় জমি খোঁজা হয়েছিল। জমি দেখা হয়েছিল মাদারীপুরের শিবচর সদর, শরীয়তপুরের জাজিরা ও নাওডোবায়। সর্বশেষ মাদারীপুর ও শরীয়তপুর সদরেও জমি দেখা হয়।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, শিবচর ও জাজিরায় যে জমি দেখা হয় তাতে এক লাখ লোককে সরাতে হতো। এটা সম্ভব নয়। তিনি জানান, আট কিলোমিটার দীর্ঘ ও ছয় কিলোমিটার প্রস্থের হবে এই বিমানবন্দর। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও স্থানীয়ভাবে বৈঠক হয়েছে। এরপর বৈঠক হয়নি।

জানা গেছে, জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোয়েই লিমিটেড ২০১৫ সালের জুলাই থেকে জাজিরা ও শিবচরে প্রকল্পের বিস্তারিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করে। আগামী জুনের মধ্যে ১৩৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সব কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এর আগেই সম্প্রতি জাপানি এই প্রতিষ্ঠান প্রতিবেদন জমা দেয়। এ পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১২০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নিপ্পন কোয়েইকে নতুন জায়গা বের করতে বলেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খাসজমি না থাকায় শিবচরে বিমানবন্দর নির্মাণ করা যাবে না। মন্ত্রণালয় বেবিচকের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়েছে।

বেবিচকের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকভাবে দুটি স্থানে—মাদারীপুরের শিবচর ও শরীয়তপুরের জাজিরায় সম্ভাব্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু উল্লিখিত স্থানে ঘন জনবসতি ও খাসজমি কম থাকায় তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য অনুপযোগী প্রতীয়মান হয়। এ অবস্থায় প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে শিবচর ও জাজিরা এলাকার পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত কম জনবসতিপূর্ণ এবং খাসজমির পরিমাণ বেশি—এমন জায়গা নির্বাচন করে সমীক্ষা শেষ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পদ্মা নদীর পারে করার চেষ্টা করে আসছে। ২০১০ সাল থেকে জমি খোঁজা শুরু হয়। আট বছরেও জমি নির্বাচন চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়নি। এর আগে ঢাকা থেকে ৯৮ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জমি নির্বাচন করা হয়েছিল। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জ ও দোহারে অবস্থিত আড়িয়াল বিলে এবং শরীয়তপুরের জাজিরায় জমি খোঁজা হয়েছিল। ১০৬ কিলোমিটার দূরে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরেও এ অবকাঠামোর জন্য উপযুক্ত জমি আছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। জার্মানির এভি অ্যালায়েন্স প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। অর্থায়ন, নকশা তৈরি, উন্নয়ন ও পরিচালনায় যুক্ত হতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি এ আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। প্রস্তাবিত বিমানবন্দরে থাকবে তিনটি রানওয়ে। প্রতিটির আয়তন হবে চার হাজার ৪২০ মিটার।

কালের কন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.