কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু: মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও সিরাজদীখান উপজেলার অন্তর্গত আড়িয়ল বিলে ভূমিদস্যুদের মাটি লুট ঠেকাতে পারছে না বিলবাসী। স্থানীয় একাধিক ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট কৃষকের ভূমি-সংক্রান্ত আইনের তথ্যাবলি না জানার সুযোগ নিয়ে নানা কৌশলে ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে জমির উর্বরতা শক্তি বিনষ্ট হয়ে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতে শুরু করেছে। অন্যদিকে ফসলি জমির মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভূমিদস্যুরা। শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈইখালী, ভাগ্যকুল, বাঘরা, হাষাঁড়া, ষোলঘর, রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আড়িয়ল বিলের ফসলি জমি লুটের হিড়িক পড়েছে।
শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল ইউনিয়নের কামারগাঁও এলাকায় সারিবদ্ধভাবে আড়িয়ল বিলের ফসলি জমি থেকে কাটা মাটির টিলা গড়ে তোলা হয়েছে। আড়িয়ল বিলের বিভিন্ন গ্রামের ফসলি জমি থেকে এসব মাটি কেটে কামারগাঁও এলাকায় রাখা হয়। এরপর এখান থেকেই বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করে থাকে ভূমিদস্যুরা। অন্যদিকে বাঘরা ইউনিয়নের কাঁঠালবাড়ী মৌজায় লিজ নেওয়া ও সরকারি খাস জমির মাটি কেটে নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। গ্রামবাসী জানায়, আড়িয়ল বিলের আবাদি জমির ওপরের অংশ থেকে মাটি কেটে নেওয়ার সঙ্গে একাধিক ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট জড়িত। কিছু জমির মালিক ভূমি-সংক্রান্ত আইনের তথ্য না জানার কারণে ভূমিদস্যুদের প্রলোভনে পড়ে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করলেও বেশির ভাগ ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অবৈধভাবে নানা কৌশলে।
গ্রামবাসী জানায়, ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটগুলো খাস জমির সন্ধান বের করে প্রথমে পাশে থাকা ব্যক্তিমালিকানার ফসলি জমির মাটি ফুট হিসেবে কিনতে প্রলোভন দেখায় সংশ্নিষ্ট মালিককে। কোনো মতে রাজি করানোর পর শুরু হয় খাস জমির মাটি লুটের কাজ। কখনও বায়না সূত্রে ও কখনও জাল দলিলে ফসলি জমির ওপর সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয় ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট। এতে ওই জমি ভোগদখলকারী জমিতে সাইনবোর্ড টানানোর কারণ জানতে চাইলে ভূমি আইনের তথ্য না জানার সুযোগ নিয়ে তাদের মাটি ক্রয়ের চুক্তিতে বাধ্য করে সিন্ডিকেট।
ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটে তিন পর্যায়ের লোকজন জড়িত। দখলের জন্য প্রথমে ভূমিকায় থাকে সন্ত্রাসী গ্রুপ, দ্বিতীয় পর্যায়ে ভূমির কাগজপত্র ভালো বোঝে এমন গ্রুপ যুক্ত হয়। আর দুই পর্যায়ের নেপথ্যে থাকে অর্থ জোগানদাতা তৃতীয় গ্রুপ। এ ছাড়া তাদের দাবি করা চাঁদা না দিলে কষ্টার্জিত ফসল রাতের আঁধারে লুট হয়ে যায়। এখন আড়িয়ল বিলেই গড়ে তোলা হয়েছে একাধিক ইটভাটা। সেখানে ইট তৈরি করা হচ্ছে আড়িয়ল বিলের মাটি দিয়েই।
২০১৬ সালে ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ ও লুটেরাদের বিরুদ্ধে আড়িয়ল বিলের জগন্নাথপট্টি এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করে পাঁচ শতাধিক বিলবাসী। সেই সমাবেশে জগন্নাথপট্টির রাজ্জাক, রিপন বেপারী, আজিজ মিয়া, শামছুল হক, আব্দুল্লাহ, মান্নান, নুরুল হকের মালিকানাসহ ২৮টি জমির মাটি কেটে বিক্রি করে দেয় ভূমিদস্যুরা। এমনকি ভয়ে শীতকালীন সবজিও ঘরে তুলতে পারেননি কৃষকরা। সেই সমাবেশে শ্রীনগর থানার ওসি ও ভাগ্যকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে আজিবর-রাসেল ও আলম বাহিনীর ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন জমির মালিকরা।
পুরো আড়িয়ল বিলের বিভিন্ন গ্রামের একই চিত্র বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জানান, আড়িয়ল বিল এলাকার ইউনিয়নগুলোর সংশ্নিষ্ট ভূমি কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রতিবেদন দাখিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সমকাল
Leave a Reply