রাহমান মনি: বিশ্বব্যাপী করোনা (কোভিড ১৯) মহামারির প্রেক্ষাপটে থমকে যাওয়া অর্থনীতিকে কিছুটা হলেও চাঙা করে তুলতে জাপান সরকার জাপানে বসবাসরত প্রত্যেক নাগরিককে নগদ এক লাখ (১,০০,০০০) ইয়েন দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহন এবং একই সাথে দেশব্যাপী জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়। জাপানে বসবাস বিদেশী নাগরিকরাও এই আর্থিক সাহায্য পাবেন।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ( কোভিড ১৯ ) মহামারির রেশ জাপানে বিস্তারলাভের প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ১৭ এপ্রিল ‘২০ শুক্রবার নিজ কার্যালয়ে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনযো আবে এই ঘোষণা দেন । তিন সপ্তাহব্যাপী এই জরুরী অবস্থা আগামী ৬ মে পর্যন্ত বলবৎ থাকবে ।
এর আগে সরকারের প্রণোদনায় ভাইরাস সংক্রমণের ফলে আয় কমে যাওয়া পরিবারগুলোকে এককালীন ৩ লাখ ইয়েন দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার নির্ধারণ করে নেওয়ার মাপকাঠি পরিষ্কার না হওয়ায় স্বয়ং ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির পাশাপাশি জোটের প্রধান ক্ষমতাসীন উদার গণতন্ত্রী দলেও বিষয়টি নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে কোভিড ১৯ মোকাবেলায় জাপান সরকার গৃহীত তহবিল ৬ লাখ কোটি ইয়েন থেকে ১৪ লাখ কোটি ইয়েন এ উন্নীত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী আবে ।
গত ৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা প্যানেল প্রধান অমি শিগেরু বড় বড় শহর গুলোতে জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপে স্বাস্থ্য সেবার ঝুঁকির আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী কে লকডাউন কিংবা জরুরী অবস্থা ঘোষণার পরামর্শ দিলে ৭ এপ্রিল রাজধানী টোকিও সহ সাতটি প্রদেশে ( প্রিফেকচার ) জরুরী অবস্থা ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী আবে। অন্যান্য প্রদেশ গুলি হচ্ছে কানাগাওয়া, চিবা, সাইতামা, হিয়োগো, ওসাকা এবং ফুকুওকা। ৮ এপ্রিল বুধবার থেকে এই জরুরী অবস্থা কার্যকর শুরু করা হয়।
আবে বলেন , চোখে দেখা যায়না অথচ সারা বিশ্ব কাপিয়ে তুলেছে করোনা ভাইরাস। আজই টোকিওতে আক্রান্তের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে যা এযাবত কালের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। টোকিওতে আক্রান্তদের প্রায় ৬০% হলো টোকিওর শিবুইয়া এলাকা থেকে এবং ওসাকাতে প্রায় ৭০% হয়েছে উমেদা শহর থেকে। আর এ দু’টি শহরে লোক সমাগম বেশী হয়ে থাকে। কাজেই বেশী লোক সমাগম হয় এসব এলাকা এড়িয়ে চলা-ই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আবে জনগনের প্রতি অনুরোধ রেখে বলেন , ভাইরাস সংক্রমণ সামাল দিতে হলে মানুষের একে অন্যের সংস্পর্শে আসা বন্ধ রাখাই যথেষ্ট নয়। আরও কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে ঘরে থাকার আহ্বান জানান তিনি। ভাইরাস সংক্রমণ যেন মফস্বল এলাকায় ছড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করে নিতে এপ্রিল মাসের শেষ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে গোল্ডেন উইক নামে পরিচিত সময়ে নিজ শহরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। জাপানিরা সাধারণত বছরের ওই সময়ে পাওয়া লম্বা ছুটি কাটাতে নিজেদের আদি নিবাসে আত্মীয়স্বজনদের কাছে ফিরে যায়। তিনি বলেন, আমি জানি এবছর যেতে না পারাটা কষ্টের কিন্তু নিজে বাঁচার জন্য এবং প্রিয়জনদের ভাল রাখার জন্য সাময়িক এ কষ্টকে মেনে নিতে হবে। আগামী
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আবে, আশংকা থাকা সত্বেও খাদ্য সরবরাহকারী সংশ্লিষ্টদের , জরুরী কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান সমূহ, পরিচ্ছন্ন কর্মী সহ দৈনন্দিন জীবন যাপন অব্যাহত রাখা সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বে আগামী মাসের ৬ তারিখে শেষ হতে যাওয়া জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে আবে বলেন, সবটাই নির্ভর করছে পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কী মতামত দেন তার ওপর। যেহেতু হাতে আরো ২০ দিন সময় রয়েছে এসময়ের মধ্যে আমরা উন্নতির আশা প্রকাশ করছি।
একই প্রশ্নের রেশ ধরে বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা শিগেরু অমি বলেন, আগামী ২০ দিনে শুন্যের কোঠায় নেমে আসবে তা আমরা আশাও করিনা । তবে তা যদি বর্তমান পরিস্থিতির ৭০ থেকে ৬০% ও নেমে না আসে তখন আমাদের নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ।
ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধ করা নিয়ে করা বিষয়ক অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা জাপানের নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ডব্লিউ,এইচ,ও’র প্রয়োজন রয়েছে, তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থার সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে তিনি মনে করেন বলে জানান।
rahmanmoni@gmail.com
সাপ্তাহিক
Leave a Reply