জাটকা সংরক্ষণে দুই মাসের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে পদ্মা-মেঘনাসহ সব নদীতে শুরু হচ্ছে মাছ ধরা। নিষিদ্ধ সময়ের মধ্যেই জেলেরা তাদের জাল-নৌকা মেরামতের কাজ সেরে নিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার অর্ধলক্ষাধিক জেলে পুরোদমে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিয়েছেন। করোনার কারণে ঘরে বসে, বাইরে বসে, বিভিন্নভাবে নিজেদের জাল ও নৌকা ঠিকঠাক করার কাজ শেষ করেছেন তারা। জীবন ও জীবিকার তাগিদে তারা পুরোদমে মাছ শিকারে নামছেন।
তবে এবার শিকার নিষিদ্ধ সময়েও নদীতে জাটকা নিধন হয়েছে ব্যাপকহারে। প্রশাসন করোনাভাইস সংক্রমণরোধে ব্যস্ত থাকায় অন্যান্য বছরের মতো নদীতে কঠোর অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি।
জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে- জেলা প্রশাসন, জেলা মৎস্য অফিস, নৌ বাহিনী, পুলিশ, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স গত দুই মাসে ৪৮৮টি অভিযানে ৭৫ জন জেলেকে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড করেছে। জাল জব্দ হয়েছে ২৯৪ লাখ মিটার, জাটকা জব্দ করা হয়েছে ১৬ মেট্রিক টন। জরিমানা করা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা। মামলা হয়েছে ৬২টি।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত জানান, এবার অভিযান ছিলো ঢিলেঢালা। করোনার সুযোগ নিয়ে অসাধু জেলেরা জাটকা নিধন করেছে। এসব জাটকা মুন্সীগঞ্জ মাওয়া হয়ে, মতলব নারায়ণগঞ্জ হয়ে অন্য জেলাগুলোতে বিক্রির জন্য পাচার হয়েছে। এ কারণে এবার ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
এই মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, ‘ইলিশের সবচেয়ে বড় আড়ৎ চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটের ২১২ জন আড়তদারসহ এই অঞ্চলের নদী তীরবর্তী অন্যান্য আড়তগুলোর মাছ ব্যবসায়ীরা তাদের গদিঘরে মাছ বিকিকিনির প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। তবে শ্রমিকরা কাজের জন্য মাছঘাটে কতটুকু আসেন, সেটিই দেখার বিষয়।’
চাঁদপুর নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহিদুল ইসলাম জানান, আমরা জাটকা নিধনরোধ এবং করোনায় অন্যান্য যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্য তিনটি বড় লঞ্চ নদীতে নামিয়েছি। কিন্তু এই সুবিশাল নদী অঞ্চলে জাটকা নিধনরোধে এতো বড় নৌযানে কাজ হয় না, লাগে ছোট ছোট স্পিডবোট। কিন্তু সেরকম বোট আছে মাত্র একটি।
চাঁদপুর সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘করোনার কারণে প্রশাসন ব্যস্ত থাকায় এবার অভিযানে কিছুট সমস্যা হয়েছে এটি ঠিক। তবে আশা করি, ইলিশের উৎপাদন আগামীতে আরও বাড়বে।’
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকি বলেন, ‘আমরা টাস্কফোর্সের অভিযানে বিপুল পরিমাণ জাল উদ্ধার করে পুড়িয়ে ধ্বংস করেছি। ৭৫ জন জেলেকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। তাদের এই সময়ে সরকারিভাবে ৪০ কেজি করে চাল সহায়তাসহ বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হয়েছে। তারপরও কোথাও কোথাও কিছু অসাধু জেলে রাতের আঁধারে মাছ ধরেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি ১০ থেকে ২০ ভাগ জাটকাও জেলেরা ধরে থাকে, তাহলেও ইলিশের অভাব হবে না। নদীতে এখনও প্রচুর জাটকা। আগামী এক বছরে এসব পরিপূর্ণ ইলিশরূপে ধরা দেবে জেলেদের জালে।’
বাংলা ট্রিবিউন
Leave a Reply