মুন্সীগঞ্জের ৭৪টি হিমাগারের ৪০ ভাগই ফাঁকা

মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলোতে এখন আলু সংরক্ষণের মৌসুম চলছে। করোনার কারণে পরিবহন চলাচল বন্ধ ও শ্রমিক সঙ্কট থাকায় বড় ধরনের লোকসানের কবলে পড়তে হবে জেলার হিমাগার মালিকদের।

মার্চের শেষ সময়ে বিস্তীর্ণ কৃষি জমি থেকে উত্তোলনের পর প্রতিবছর এপ্রিলের শুরু থেকেই আলু সংরক্ষণ শুরু হয়। এসময় হিমাগার কর্তৃপক্ষকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এবার সেই চিত্র পাল্টে গেছে। দেশের প্রতিটি হিমাগার আলুতে পরিপূর্ণ থাকার এই সময়ে এখনও হিমাগারগুলোর ৪০ ভাগ খালি পড়ে আছে।

আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে আলু নিয়ে হিমাগারগুলোতে আসতে পারছে না কেউ। কর্তৃপক্ষ মনে করছেন হিমাগারগুলো খালি পড়ে থাকায় মুন্সীগঞ্জের ৭৪টি হিমাগার মালিকপক্ষকে লোকসান গুনতে হবে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা।

এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সড়কে পরিবহন চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।

বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন পুস্তি এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, সংরক্ষণ মৌসুমের এ সময়ে করোনা আতঙ্কের কারণে অস্বাভাবিক আলু কিনছে ক্রেতারা। ফলে বাজারে অতিরিক্ত চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে। এ কারণে বাড়তি দামে কিনে আলু সংরক্ষণে আগ্রহ কম ব্যবসায়ী ও কৃষকের। আবার যারা সংরক্ষণ করতে চাইছে, তারাও পর্যাপ্ত পাচ্ছেন না। যেসব কৃষক ও ব্যবসায়ী বাজার থেকে কিছু সংগ্রহ করতে পেরেছেন, তারাও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এখন নানা বাধার মুখে পড়ছেন। এ অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

মোশাররফ হোসেন পুস্তি বলেন, ‘এখন সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে বছরব্যাপী চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না। মৌসুমের শেষদিকে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এ জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করা এবং কৃষক হিমাগারে আলু নিয়ে যেতে বাধার মুখে না পড়ে তার জন্য প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতাও একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।’

অ্যাসোসিয়েশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আলু সংরক্ষণে সারাদেশে ৪২৯টি হিমাগারের মধ্যে ৪০০টির মতো চালু রয়েছে। এগুলোতে ৫৫ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করার সুযোগ আছে। এবার ৩৬ লাখ টন আলু সংরক্ষণ হবে বলে মনে করছেন সংগঠনের নেতারা। সংরক্ষণ মৌসুমের অর্ধেক সময়ে এ পর্যন্ত ৬০ ভাগ আলু হিমাগারে এসেছে। এখনও হিমাগার গুলোর ৪০ ভাগ ফাঁকা। তাই কোটি কোটি টাকা লোকসানের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হিমাগার মালিকরা।

মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার আলী কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার আব্দুল গফুর কাজী জানান, দেশে এবার আলুর বাম্পার ফলন হলেও উৎপাদন হয়েছে কম। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে পরিবহন বন্ধ থাকায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে আনতে পারছে না। দিন যতো বাড়বে, হিমাগার মালিকদের লোকসানের পরিমানও বাড়বে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন পুস্তি আরো জানান, দিন দিন কৃষি জমির পরিমান কমে যাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে জনসংখ্যা। তাই চালের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আলুর প্রতি খাদ্যাভ্যাস বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেওয়া না হলে মৌসুমের শেষে চরম ঘাটতিতে পড়তে হবে।

রাইজিংবিডি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.