রাহমান মনি: নষ্টরা সত্যিকারের সাংবাদিকদের স্থায়ী বন্ধু হতে পারে না। আর নষ্টরা যদি সাংবাদিকদের স্থায়ী বন্ধু হয় তাহলে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার অন্তরায় হয়ে দাড়ায়। কথাগুলো বলে ছিলেন জাপানি এক সিনিয়র সাংবাদিক।
তিনি আরো বলেছিলেন, তুমি যদি সত্যিকার অর্থেই সাংবাদিকতা করতে যাও তাহলে দেখবে দিন দিন তোমার বন্ধুর সংখ্যা কমে যাবে এবং আনুপাতিক হারে শত্রু বেড়ে যাবে। স্বার্থে আঘাত লাগলেই তারা তোমার পিছনে লাগবে এবং তাদের সাথে আরও কিছু যোগ হবে। কারন নষ্টদের পাল্লা ভারী থাকে।
আমি একজন সংবাদকর্মী মাত্র। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে সংবাদ সংগ্রহ এবং জানান দেয়া আমার দায়িত্ব এবং কর্তব্যও।
সংবাদকর্মী বা সাংবাদিকগণকে আবার কার্যক্ষেত্রে সংবাদপত্র প্রতিনিধি, টেলিভিশন সংবাদদাতা বা বেতার সাংবাদিক ইত্যাদি বিভিন্ন পর্যায়ে বিভাজন ঘটানো হয়েছে। এছাড়াও, অবস্থানের ভিত্তিতেও নামকরণে বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। তন্মধ্যে, স্টাফ রিপোর্টার, প্রতিনিধি, সংবাদদাতা ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়। তারা প্রত্যেকেই স্ব-স্ব মাধ্যমের জন্য সত্য ও বস্তুনিষ্ঠতার সাথে ঘটনাবহুল এবং গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রেরণ করে থাকেন ।
এখন দেখা যাক সংবাদ বা খবর কাকে বলে এবং কোন ঘটনাকে সংবাদ হিসেবে প্রাচার করা যাবে আর কোনটা নয়। কারন, সব খবর-ই কোন না কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিন্তু ঘটনাই খবর হয় না।
যদিও খবর বা সংবাদ-এর নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে এক কথায় বলা যায় সংবাদ হলো চলতি ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ, যা পাঠকের আগ্রহ উদ্দীপিত করে। এ কথাটাকে একটু কঠিন করে বললে এভাবে বলা যায়: স্থিতাবস্থার পরিবর্তনে সৃষ্ট ঘটনা, যাতে সমাজে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং যা অবশ্যই সত্য, বস্তুনিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ, তাকে খবর বা সংবাদ বলে। new হচ্ছে নতুন আর সেই new -এর বহুবচন হচ্ছে news। এজন্য সংবাদ বিশ্লেষকরা বলেন, news must be new।
খবরের বিশেষত্ব কী:
আমাদের মনে রাখতে হবে-যা দেখি, তা খবর; যা জানি, তা প্রেক্ষাপট (background) এবং যা অনুভব করি, তা মতামত।
খবরের যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত্ব আছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে :
ক. সংবাদ কোনো ঘটনা নয়, ঘটনার প্রতিবেদন মাত্র;
খ. খবর সাধারণত কোনো নতুন বা সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবেদন।
গ. সংবাদ অবশ্যই নির্ভুল হতে হবে
ঘ. সংবাদের তথ্যগুলোকে অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে
ঙ. প্রতিটি প্রতিবেদনই হবে নিরপেক্ষ বা ভারসাম্যপূর্ণ
চ. সংবাদ হতে হবে সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট।(সংগৃহীত)
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, উপরোল্লিখিত নীতি মেনে সত্যিকার অর্থে খবর প্রকাশ করলে কি সবার কাছে নিরপেক্ষ থাকা যাবে ? আর, যদি মানা না হয় তাহলে কি সাংবাদিকতার নীতি বা নীতিমালা বজায় রাখা যাবে ?
একটি সংবাদ বিশেষ করে অনুসন্ধানী রিপোর্ট বা ফৌজদারি সংবাদ প্রকাশ করা করলে কারো না কারোর প্রতিকুলে যাবেই।
আর সত্যিটা যখন বেড়িয়ে আসে তখন যাদের আঁতে লাগে তখন তারা উঠে পড়ে লাগে সাংবাদিকের পেছনে। সংবাদের বিষয় বস্তু তারা ধাতব্যে না নিয়ে, তথ্যের পেচ্ছনে তথ্য না দিয়ে সাংবাদিকের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কুৎসা রটনায় মেতে উঠে।
রঙ লাগানো হয় সাংবাদিকের ব্যক্তি চরিত্রে।
নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠায়। তাদের কথামতো ফরমায়েশি নিউজ কিংবা তাদের পক্ষে হলেই তা হয়ে যায় নিউজ। আর পছন্দ না হলেই নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমি দ্বের্থহীন ভাবে বলতে চাই নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা বলতে কিছুই নেই। সাংবাদিক কে অবশ্যই একটি পক্ষের হয়ে কাজ করতে হয়। আর সেটা হ’লো সত্য পক্ষ।
প্রতিপাদ্য বিষয় তথ্য নির্ভর, বস্তুনিষ্ঠ এবং প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করতে পাড়াটাই একজন সংবাদকর্মীর বড় সাফল্য।
নিরপেক্ষতা প্রমানের জন্য বিভিন্ন ধরণের মতামত তুলে ধরে পত্রিকার পাতা ভরানোর কোন প্রয়োজন নেই।
নিরপেক্ষতা নিয়ে অনেক ভুল বোঝা-বুঝি আছে, বিশেষ করে তাদের মাঝে যারা মনে করেন নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা একটি কাল্পনিক ব্যাপার মাত্র।
অনেকে আবার মনে করেন, বস্তুনিষ্ঠতা, পক্ষপাতহীনতা, ভারসাম্য এবং ন্যায্যতা-র মত পরিভাষা আর নিরপেক্ষতার মানে এক। কিন্তু এগুলো একে অপরের সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই, তারা একই জিনিস নয়। পক্ষ একটা থেকেই যায়। আর, তা হচ্ছে সত্য পক্ষ।
কাজেই সাংবাদিকতায় নিরপেক্ষতা বলতে স্থায়ী কিছু নেই ।।
rahmanmoni@gmail.com
Leave a Reply