মোট আলু আবাদ ৩৭ হাজার হেক্টর
• উৎপাদন ১৩ লাখ মেট্রিক টন
• মোট হিমাগার ৬৫টি
• ধারণক্ষমতা ৫ লাখ মেট্রিক টন
উৎপাদন খরচ ওঠানোর আশায় বাড়িতে গোলাঘর তৈরি করে তাতে দীর্ঘদিন আলু সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করেও উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা, উল্টো আলু পচে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ হয়েছে দ্বিগুণ। গুনতে হচ্ছে বাড়তি লোকসান। এতে কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ জেলায় প্রধান উৎপাদনকারী ফসল আলু। আলু উৎপাদনে দেশের শীর্ষস্থানে রয়েছে জেলাটি। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে আলু উত্তোলন শুরু হয়। সে সময় হতে আলুর ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বিক্রি থেকে মজুতে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেন কৃষকরা।
এবার প্রতি কেজিতে আলুর উৎপাদন খরচ হয় ১২ থেকে ১৩ টাকা আর উত্তোলন মৌসুমে বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে ১১ থেকে ১২ টাকায়। এরপর দাম আরও কমে চলে আসে ১০ থেকে ১১ টাকায়। এখন আবার দাম কিছুটা বেড়ে গোলার আলু ১২ থেকে সাড়ে ১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, উৎপাদন খরচ পাওয়ার আশায় আলু তুলে হিমাগারের পাশাপশি জমিতে এবং বাড়ির গোলাঘরে সংরক্ষণ করে রাখেন তারা। কিন্তু ঝড়বৃষ্টির কারণে আলু সংরক্ষণ করে রাখা জমিতে পানি জমতে শুরু করায় বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়েই বিক্রি করেন তারা। আর বাড়িতে সংরক্ষণ করে রাখা আলু পচে যাওয়ায় তা কৃষকের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যেভাবে পচন শুরু হয়েছে, এখন যদি বিক্রি করা সম্ভব না হয়, তাহলে কিছুদিন পর গোলায় ভালো আলুর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। তখন পচা আলু শ্রমিক নিয়ে গোলাঘর থেকে পরিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় আলু পচার গন্ধে গোলাঘরের আশপাশে বসবাস করা দায় হবে বলে জানান তারা।
এ ব্যাপারে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার চাঠাতি পাড়া গ্রামের কৃষক সাত্তার বেপারী ঢাকা পোস্টকে জানান, হিমাগারের পাশাপশি বাড়িতেও আলু সংরক্ষণ করেছিলাম। কিছুদিন আগেও আলুর পাইকার পাইনি। এখন কিছু পাইকার আসছে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট ভিজে যাওয়ায় পাইকাররা বাড়ি থেকে আলু গাড়িতে করে নিতে পারছেন না। আলুতে যেভাবে পচন ধরেছে, দ্রুত বিক্রি করতে না পারলে সব আলু পচে যাবে।
একই উপজেলার মান্দ্রা গ্রামের চাষি তমিজ খান বলেন, আমি একটি গোলায় ৪০০ মণ আলু রাখছিলাম। এলাকার এক পাইকারকে বললাম, আমার আলুগুলো নিয়ে যাও, আড়তে বিক্রি করে টাকা দিয়ো। পরে আলু মেপে দেখি অর্ধেক আলু ভালো আর অর্ধেক পচে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মুন্সিগঞ্জের উপপরিচারক মো. খোরশীদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বাড়িতে গোলাঘরে কৃষককে দেড় ফুট লেয়ার (উঁচু) করে আলু সংরক্ষণ করার পরমর্শ দিয়ে থাকি। কিন্তু কৃষকদের পর্যাপ্ত গোলাঘর না থাকায় তারা ৪ থেকে ৫ ফুট উঁচু করে আলু সংরক্ষণ করেন। নিয়ম হলো আলু সংরক্ষণ করার পর এগুলো মাঝেমধ্যে নেড়ে-বেছে পচা আলুগুলো সরাতে হবে। কিন্তু তারা ৪ থেকে ৫ ফুট উঁচু করে আলু সংরক্ষণ করায় সেটা সম্ভব হয় না। এতে একটা আলু পচলে তার পাশের আলুটিতেও পচন ধরে।
তিনি জানান, এ বছর মুন্সিগঞ্জে ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে ১৩ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জে বর্তমানে ৬৫টি হিমাগার সচল রয়েছে। এগুলোর ধারণক্ষমতা ৫ লাখ মেট্রিক টন। বাকি আলু কৃষক জমিতে বাড়িতে সংরক্ষণ ও জমি থেকে বিক্রি করেছেন।
ব ম শামীম/ঢাকা পোষ্ট
Leave a Reply