হারিয়ে যাচ্ছে ফলি মাছের কোপ্তা: মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্য

মো. শওকত হোসেন: ফলি মাছের কোপ্তা ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে জনপ্রিয় হলেও কালের বিবর্তনে আজ এটি বিলুপ্তির পথে। তাই, নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছে কোপ্তা শব্দটাই অপরিচিত। মাছে ভাতে বাঙালি এটি একটি প্রবাদ। যে প্রবাদে বাঙালির পরিচয়কেই তুলে ধরা হয়েছে। তবে নানা পদের মাছ দিয়ে, নানান রান্নার খ্যাতি আছে। তেমনি এক রান্নার নাম ‘কোপ্তা’। আগের দিনে বড় ফলি মাছ দিয়ে এই কোপ্তা রান্না হত, এখন আর তেমন বড় ফলি মাছ পাওয়া যায় না। এক সময় বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পুকুর বা বিলে একটু বড় সাইজের ফলি মাছ ধরা পরলেই কোপ্তা খাওয়ার আকর্ষণটা বেড়ে যেত। গ্রামীণ নারীর হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় তৈরি হতো ফলি মাছের কোপ্তা। গৃহিনীরা ফলি মাছের পেটের বর্জ ফেলে পরিস্কার করে পাটায় রেখে পুতা দিয়ে আস্তে আস্তে ছেঁচতো, মাছের চামড়াটি অবিকল রেখে মাংস অংশ আলাদা করা হত। এরপর প্রয়োজনীয় মসলা মিশিয়ে কাটাগুলো বাদে আবার চামড়ার ভেতর ঢুকনো হত, পিস করে কেটে তৈলে ভাজলেই সুস্বাদু কোপ্তা হয়ে যেত। কাটাগুলো ও মচমচে করে ভাজা হত। মুন্সীগঞ্জে এখন ফলি মাছ খুবই দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে, নতুন প্রজন্মের গৃহকর্ত্রীরা অনেকেই জানেন না কোপ্তা কী? বা ফলি মাছের কোপ্তা কিভাবে তৈরি করতে হয়। তাই ইচ্ছে থাকলেও খাওয়া যায় না। আবার বাজারে যে চাষ করা ফলি মাছ পাওয়া যায় তা ততটা স্বাদের হয় না।

তবে সচরাচর চোখে না পড়লেও গ্রামাঞ্চলের কিছু কিছু সৌখনপ্রিয় গৃহবধূরা সময়ের ফাঁকে অমৃত স্বাদের খাবারটি এখনো তৈরি করেন। কিন্তু শহরকেন্দ্রিক প্রবীন মানুষজন এখনো খুঁজে ফেরেন ফলি মাছের কোপ্তা। বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির এ ঐতিহ্যবাহী খাবারের সু-ঘ্রাণ যা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় গ্রাম বাংলার ‘কোপ্তা’ প্রচলন থাকলেও এখন তা আর তেমন চোখে পড়ে না। কিন্তু বর্তমানে সমাজ সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়ার মাঝে আপামর বাঙালির খাবার কোপ্তা এখন অনেকটাই স্মৃতি। এর কারন হিসেবে প্রধান দেশিয় মাছের অভাব।

দিন বদলের ধারায় আর দেশিয় মাছের বিলুপ্তিতে আজ খাবারের মেনু থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবারটি। এখন আর চোখে পড়ে না কোপ্তা তৈরি করতে বাড়ির নারীদের কর্মব্যস্ততা। হাটে-বাজারে ফলি মাছ বিক্রির দেখা নেই। তবে খুব বেশি দেখা না গেলেও এখনো মাঝে মধ্যে উপজেলার কোথাও কোথাও দেখা মেলে এই মুখরোচক খাবার কোপ্তা। শখের বশে অনেকেই ঐতিহ্যবাহী খাবারটি এখনো তৈরি করেন।

ইনকিলাব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.