স্বামীর পরকীয়া জেনে ফেলাই কাল হলো স্বর্ণার

স্বামীর পরকীয়ার কথা জেনে যাওয়ায় খুন হতে হলো স্বর্ণা আক্তার (২২) নামের এক গৃহবধূর। স্বর্ণা আক্তার মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বেজগাঁও গ্রামের শাহজাহান ঢালীর মেয়ে।

অভিযোগে জানা যায়, গত ২০১৭ সালে একই ইউনিয়নের পাশের কুড়িগাঁও গ্রামের নুরইসলাম বেপারীর ছেলে মো. রনি হাসানের সঙ্গে স্বর্ণার বিয়ে হয়। বিয়ের বেশ কিছু দিন পার হলেও স্বর্ণার কোনো সন্তান না হওয়ায় স্বর্ণার ওপর মাঝে মধ্যে চাপ সৃষ্টি করত হাসানের পরিবার। এমনকি তাকে তালাক দেওয়ার ভয় দেখাত হাসান।

ডাক্তারের নানান চিকিৎসা শেষে স্বর্ণার কোলজুড়ে যমজ দুটি সন্তান আসে। একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের বয়স এখন দেড় বছর।

এলাকাবাসী জানান, স্বর্ণার স্বামী রনি হাসানের অঢেল টাকা-পয়সা থাকায় এবং স্বর্ণার বাবা একটু দুর্বল হওয়ায় রনি হাসানের পরিবার কখনই স্বর্ণাকে ভালো দৃষ্টিতে দেখত না। স্বর্ণার ছোটবোন রুপা জানান, বেশ কিছুদিন আগে রনি হাসানের ছোটভাই (স্বর্ণার দেবর) রবিনের সঙ্গে তার মামি শাশুড়ির আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্বর্ণা তার স্বামী রনিকে বিষয়টি জানায় এবং রবিনকে শাসন করতে বলেন।

এরপর থেকে স্বর্ণার ওপর শুরু নানান নির্যাতন। একপর্যায়ে স্বর্ণা জানতে পায় রনি হাসানের সঙ্গে ও তার মামি শাশুড়ির অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে স্বর্ণা ঈদের পর সন্তান দুটিকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন।

আর রনি হাসানের পরিবার ভাবে রনির সঙ্গে মামির পরকীয়ার কথা জানতে পেরে স্বর্ণা তার বাবার চলে গেছে; আর আসবে না। তাই নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে গত শনিবার রনি হাসানের পরিবার তার ছোট বোনের জামাই উজ্জ্বলকে পাঠায় স্বর্ণাকে তার বাবার বাড়ি থেকে রনিদের বাড়িতে নেওয়ার জন্য। স্বর্ণা তার ননদের স্বামী উজ্জ্বলের সঙ্গে কামরাঙ্গীরচর ফিরে যায় রনিদের বাসায়। এদিকে স্বর্ণা তার বাবাকে বাড়ি থেকে আম নিয়ে যেতে বলে তার বাসায়।

নিহত স্বর্ণার পরিবার জানায়, স্বর্ণার বাবা শাহজাহান ঢালী বুধবার সকালে মেয়ের জন্য আম, দুধ নিয়ে স্বর্ণার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে কেরানীগঞ্জ পৌঁছলে স্বর্ণার ননদের স্বামী উজ্জ্বল স্বর্ণার বাবাকে ফোনের মাধ্যমে জানায় স্বর্ণার সঙ্গে রনির ঝগড়া হচ্ছে আপনি দ্রুত বাসায় চলে আসেন।

এ খবর শুনে শাহাজাহান ঢালী খুব দ্রুত স্বর্ণাদের কামরাঙ্গীর চরের বাসায় পৌঁছে দেখে স্বর্ণার স্বামী রনি ও তার মা, বোন ও বোনের স্বামী উজ্জ্বল সবাই বাসার ড্রইং রুমে বসে গল্প করছেন। স্বর্ণার কথা জানতে চাইলে বলে স্বর্ণা তার রুমে আছে খোঁজ নেন। স্বর্ণার রুমটি ভেতর দিক দিয়ে বন্ধ ছিল। স্বর্ণার বাবা দরজা ধাক্কা দিতেই দেখে মেয়ের নিথর দেহ একাংশ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে আর গলাটি ফ্যানের সঙ্গে ওড়না লাগিয়ে ঝুলছে। এ অবস্থা দেখে তিনি অনেকটা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

বিষয়টি জানানো হয় সব আত্মীয়স্বজনকে। এরপর কামরাঙ্গীরচর থানায় নেওয়া হয় স্বর্ণার লাশ। পুলিশ মামলাটি নিতে প্রথমে গড়িমসি করে এরপর বৃহস্পতিবার মামলাটি রুজু করে আত্মহত্যা বলে। মামলায় আসামি করা হয় শুধু রনি হাসানকে। এই ঘটনায় হত্যার কথা স্বীকার করে রনি হাসান থানায় নিজে আত্মসমর্পণ করেন।

এ বিষয়ে নিহতের বাবা বাদী হয়ে কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এই বিষয়ে কামরাঙ্গীরচর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা একটি আত্মহত্যা প্ররোচনার অপরাধে একটি মামলা রুজু করি। এ বিষয়ে আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী রনি হাসানকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর বলা যাবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা।

এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে স্বর্ণার লাশ তার বাবার বাড়ি লৌহজংয়ের বেজগাঁয়ে সন্ধ্যা ৬টায় নিয়ে আসা হলে আত্মীয়স্বজনদের কান্নায় আকাশ ভারি হয়ে উঠে।

যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.