পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে মুন্সীগঞ্জে সাজসাজ রব

আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী মুন্সীগঞ্জে সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন। বিদেশি কূটনীতিকসহ দেশ বরেণ্য সুধীজনরা উপস্থিত থাকবেন এই অনুষ্ঠানে। এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে মুন্সীগঞ্জে আনন্দের আমেজ বিরাজ করছে।

বর্তমানে মুন্সীগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ স্থলের দৃষ্টিনন্দন মঞ্চ তৈরিসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাজ শেষ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মীরা। এছাড়া সেতুর নাম ফলক ও ম্যুরাল স্থাপনের কাজ প্রায় শেষের পর্যায়ে। অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজও চলছে পুরোদমে।

এদিকে পদ্মা সেতুর রেলিং, মুভমেন্ট জয়েন্ট ও প্যারাপেটের কাজও প্রায় শেষ। সেতুর বিভিন্ন অংশের সড়ক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও চলছে। এই সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সারাদেশের মানুষের মধ্যে এখন আনন্দ উৎসাহ ও উদ্দীপনা বিরাজ করছে।

২২ মিটার প্রশস্ত ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতু নির্মাণে কাজ করেছে চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া পদ্মা সেতু ঘিরে উন্নত হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। পদ্মা পাড়ে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্প কারখানা। এতে প্রচুর সংখ্যক বেকরা তরুণ তরুণীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে।

লৌহজং যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মরতুজা আহমেদ বলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে লৌহজং উপজেলার সবার মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের এপারে একটি সুধী সমাবেশ করবেন। তাই উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে বরণ করতে লৌহজং উপজেলাবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। সেতুর কারণে আমাদের এলাকার জায়গার দাম অনেক বেড়েছে। এছাড়া এলাকাটি পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। যা আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থায় পরিবর্তন আনবে।’

পদ্মা সেতুর প্রকল্পের ব্যবস্থাপক দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, “সেতুর কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু বিভাগকে পদ্মা সেতু বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে, এরপরও এক বছর তারা ‘ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড’ এর কাজ করবে।”

সেতুর সহকারী প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ মজুমদার বলেন, ‘হ্যান্ডওভারের পর এখন আমরা টুকটাক কাজ যেগুলো বাকি আছে তা দেখে নিচ্ছি।’

এদিকে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সফল করতে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান স্থানীয় সংসদ সদস্যরা।

মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক জাতীয় সংসদের হুইপ অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। এই এগিয়ে যাওয়ার পথে স্বপ্নের পদ্মা সেতু এক বিশাল মাইলফলক। যতদিন দেশ থাকবে ততদিন বাঙালি মনে রাখবে, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এবং মানুষের সুবিধার জন্য নিজেদের অর্থে বঙ্গবন্ধু কন্যা এই সেতু নির্মাণ করেছেন। এই সেতু শুধু সেতু নয়, এটা আমাদের আত্মমর্যাদার পরিচয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘২৫ জুন উপলক্ষে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। প্রশাসন প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর সঙ্গে আমাদের সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনও কাজ করছে।’

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেন, ‘আমি মুন্সীগঞ্জ জেলাবাসী ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। তার ঐকান্তিক অদম্য ইচ্ছা শক্তির প্রতিফলন হচ্ছে পদ্মা সেতু। তাকে আন্তরিক অভিবাদন জানাচ্ছি।’

মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন বলেন, ‘উদ্বোধনকে ঘিরে মুন্সীগঞ্জকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে চেকপোস্ট ও ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ জেলায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পুলিশের টহল সেতুসহ আশপাশের প্রতিটি স্থানে জোরদার করা হয়েছে।’

আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দুয়ার উন্মোচন হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। ২৬ জুন সকাল থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

রাইজিংবিডি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.